সাংবাদিককে কৃতজ্ঞতা

চাঁদপুরে গৃহবন্দী মুক্তিযোদ্ধার বাঁধন খুললেন ইউএনও

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) :
: | আপডেট: ১২ মে, ২০২৫, ০২:১৬ পিএম : | প্রকাশ: ৮ মে, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
চাঁদপুরে গৃহবন্দী মুক্তিযোদ্ধার বাঁধন খুললেন ইউএনও

চাঁদপুরে কাগজে কলমে মৃত সুজন তালুকদার নামে জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে গৃহবন্ধী করে খাটের সাথে বেঁধে রাখার দৃশ্য নিজের স্বচক্ষে দেখে সে বাঁধন খুলে দিলেন সদর ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত। এসময় তিনি এই জঘন্য অপরাধের জন্য দোষীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছেন।

৮ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে মিশনরোডে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে সুজন তালুকদারের ভাড়া বাসায় সরজমিনে সুজন তালুকদার জীবিত না মৃত সে তদন্তে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এসব জানিয়েছেন সদর ইউএনও।

এসময় তার সাথে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মডেল থানার পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছিলেন। ঘটনাস্থলে ইউএনও পৌছে সুজন তালুকদারকে একটি কক্ষে খাটে বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখে অসীমার ওপর চরম রাগান্বিত হন এবং কিভাবে কাগজে কলমে সুজন মৃত হলেন সেজন্য তার স্ত্রী অসীমাকে অপরাধী বলে জানান দেন। যদিও এসময় অসীমা প্রশাসনের লোকজন আসার খবরে টের পেয়ে আগেই বাসা হতে সটকে পড়েন।

চাঁদপুর সদর ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, যেকোন জাল কাগজপত্র দাখিল একটি ফৌজদারী অপরাধ। এটি শুনলাম ২০২০ সালেই অসীমা দাখিল করেছেন। একজন স্ত্রী হয়ে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করার দৃশ্য এটিই আমি প্রথম দেখলাম। সাংবাদিককে ধন্যবাদ এবং আশ্বস্ত করছি আমরা অসীমার বিরুদ্ধে এ ঘটনায় যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় যাবো।

এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই মজিবুর রহমান বলেন, এই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে যাতে অন্যত্র ওনার স্ত্রী চলে যেতে না পারে এবং তিনিও এখান হতে অন্যত্র যেতে না পারে ও একই সাথে মুক্তিযোদ্ধাকে মেরে ফেলতে পারে এমন চিত্র দেখে তা উর্দ্ধতনের সাথে আলাপ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করে রাখা হবে।

এর আগে চাঁদপুর শহরের চিত্রলেখার মোড়ের সোনালী ব্যাংক শাখা হতে বছরের পর বছর সুজন তালুকদারকে মৃত দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা আত্মসাৎ করছিলেন তার স্ত্রী অসীমা তালুকদার।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সোনালি ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন,আমাদের এখানে সুজন তালুকদারসহ মোট ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশরা নিয়মিত ভাতা তুলছেন। যারা মাসে ২০ হাজার টাকা, এর সাথে দুই ঈদে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা ঈদ ভাতা এবং বৈশাখী ভাতা হিসেবে সবাইকে আরও ২ হাজার টাকা করে সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমাদের এ শাখায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ৭২৬ জন। এরমধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ৩৩১ জন। জীবিতদের প্রত্যেককে বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশ বেশি হওয়ায় মোট উপকারভোগী এখানে ৯৫৭ জন। তবে সুজন তালুকদারের অর্থ একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে তার স্ত্রী অসীমা তালুকদারই তুলছেন।

এদিকে সরকারি ওয়েব সাইটে বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমেও দেখা যায় সুজন তালুকদার মৃত। সেখানে তার মুক্তিযোদ্ধার নম্বর হচ্ছে ০১১৩০০০১৬০২ এবং বেসামরিক গেজেট ৫৫ এবং লাল মুক্তিবার্তা ০২০৫০১০২৭০। তার পিতা হচ্ছেন মৃত হরে কৃষ্ণ তালুকদার এবং ঠিকানা হচ্ছে গ্রাম ৬৬, মেথা রোড, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।


সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার বলেন, আমার কাকুকে ত কাগজে কলমে মেরে ফেলেছেন কাকি বহু আগে। এখন ওনার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কাকুকে নিয়ে চাঁদপুর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। যাতে সেখানে নিঃসংকোচে কাকুকে মেরে কোথায় ফেলে দেয়া যায়। ওনি মূলত পরকিয়াসহ নানান অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় এমন অমানবিক আচরণ করছেন কাকুর সাথে দীর্ঘদিন।

সুজন তালুকদারের বৌদি কল্পনা তালুকদার বলেন,সুজনকে ঘরে গৃহবন্ধী করে রাখে অসীমা। এতে করে সুজনকে কেউ স্বচক্ষে দেখে না বিধায় অসীমা এসব অপকর্ম দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সুজনের নিরাপত্তা চাই। একই সাথে অসীমার মতো প্রতারকের থেকে রাষ্ট্রীয় পুরো অর্থ ফেরত নেয়া ও তাকেসহ তার সহযোগীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থার দাবী জানাচ্ছি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই অসীমা তালুকদারের। তিনি বলেন, আমি সবাইকে মামলায় জড়াবো। সুজনের চিকিৎসায় সব অর্থ ব্যয় করেছি। বেশি বাড়াবাড়ি কেউ করলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রের সাথে এই প্রতারণার তথ্য সঠিক হলে ওই ভাতা বন্ধসহ সাংবাদিককে বড় রকমের পুরুষ্কার দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। প্রতারক যতই ছল চাতুরীর আশ্রয় নিক না কেনো: আমরা বিন্দুমাত্র নমনীয়তা তার সাথে আইনগতভাবে দেখাবো না। অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে