গ্রামের পথে সারি সারি নারিকেল গাছ। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। গ্রামীণ এমন দৃশ্য স্মৃতিতে আজও অম্লান। নারিকেল গাছের সারি আজও আছে তবে নেই শুধু কাঁধি কাঁধি ফল। উপকুলীয় জনপদ কয়রায় নারকেল গাছ থাকলেও আগের মতো ফলনের দেখা মিলছে না। সচেতন মহলরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবকে দায়ি করছে। এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে কয়রায় অজ্ঞাত কারণে নারিকেলের ফলন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। অকৃত্রিম বন্ধু জীবনবৃক্ষের ফলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়রা অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নারিকেল গাছ। এক সময় বাড়ির আঙিনায়, জমির পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ যেমন শোভা ছড়াত, তেমনই দিত সুস্বাদু ফল। কিন্তু কালের বিবর্তনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে কয়রা সদর, দক্ষিণ বেদকাশি, উত্তর বেদকাশি, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, বাগালী সহ আমাদী ইউনিয়নের অনেক এলাকায় বিলুপ্ত হতে বসেছে এই নারিকেল গাছ।
নারিকেল খুবই সুস্বাদু ফল। ডাব পুষ্ট হয়ে নারিকেলে পরিণত হয়। ডাবে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়ামসহ ওষুধি গুণ রয়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের বিকল্প নেই। সব মিলে এ এলাকায় ডাব-নারিকেলের বিশেষ কদর। বিগত দশকে নারিকেল গাছগুলো সব থেকে বেশি ফল দিত। বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনে গাছগুলো ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। গাছগুলোর দুর্বলতার কারণে ফল ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। আগে নারিকেল গাছে বারো মাসই ডাব-নারিকেল পাওয়া যেত। বর্তমানে গাছগুলো দুর্বল হয়ে আর ফল দিচ্ছে না। শীতের সময় ঘনকুয়াশা আর গ্রীষ্মের খরায় নারিকেল গাছ রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। নারিকেলের গুটিতে এক ধরনের মাকড়সার আক্রমণে গুটি ঝরে যাচ্ছে। কেউ আবার বলছে, মোবাইলের টাওয়ারের ফ্রিকোয়েন্সির কারণে নারিকেলের ফলন অস্বাভাবিক কমে গেছে। কপোতাক্ষ কলেজের সাবেক অধ্যাপক আ, ব,ম আঃ মালেক বলেন, কয়রায় দিন দিন লবনাক্তায় গ্রাস করছে। লবনাক্তার প্রভাব পড়ছে গাছগাছালিতে। এতে করে গাছগুলো রোগাক্রান্ত হচ্ছে। অন্যদিকে ফলনও কমে যাচ্ছে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের বতুলবাজার গ্রামের বাসিন্দা আঃ মালেক পাড় বলেন, এক সময় গ্রামে প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল। তাতে প্রচুর ডাব ও নারিকেল পাওয়া যেত। ডাব-নারকেল বিক্রি করে বাড়তি আয় হতো। এখন যেসব গাছ রয়েছে তা রোগাক্রান্ত। তাতে ডাব তেমন ধরে না। ফলে গাছগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে করে তার গ্রামের অনেক মানুষ নারিকেল গাছ কেটে ফেলছে। কয়রা উপজেলার উপ সহকারি কৃষি অফিসার মোঃ ফারুক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবের শিকার হচ্ছে নারিকেল গাছ। জীবনবৃক্ষ এই উদ্ভিদ এক সময় গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখত। এটি ধরে রাখতে প্রতি বছর কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রচুর নারকেল গাছের চারা বিতরন করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই গাছ সংরক্ষণের জন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।