আওয়ামী লীগের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে সরকার আত্মবিশ্বাসী অবস্থান নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “গণতান্ত্রিক বিশ্ব কখনো এই নির্লজ্জ, খুনি, গণতন্ত্রবিরোধী ও দুর্নীতিপরায়ণ দলের পক্ষে কথা বলবে না।”
রোববার (১১ মে) প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে বিশ্বের কোনো দেশ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাতে দুঃখ প্রকাশ করবে বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাবে।”
প্রেস সচিবের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব, জুলাই আন্দোলনের কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অত্যাবশ্যক ছিল। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি ও ইতালি যেমন নাৎসি ও ফ্যাসিস্ট দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেছিল, তেমনি স্পেন ও বেলজিয়ামে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রমের দায়ে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার নজির রয়েছে।
শফিকুল আলম আরো বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের প্রতিবেদনে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব, দলীয় কর্মী এবং তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ও নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, ব্যাংক লুট করেছে এবং বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে প্রেস সচিব স্পষ্ট করেন, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
একইদিন যশোরে একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের আগে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয় এবং আইসিটি অ্যাক্টে সংশোধনের মাধ্যমে দলটিকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনা অনুমোদন দেওয়া হয়।
ভারতের কিছু মিডিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা নিয়ে তিনি বলেন, “ভারতীয় মিডিয়া অনেক দিন ধরেই প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তাদের কিছু মিডিয়ার সাংবাদিকতা দায়িত্বশীল নয় বরং নাটক করে বিনোদন দেওয়াটাই যেন তাদের উদ্দেশ্য।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, বাংলাদেশের সাংবাদিকতা আরও দায়িত্বশীল ও প্রশংসনীয় হোক।”
তিনি অতীতের কিছু গণমাধ্যমকে আওয়ামী লীগের ‘টুলস’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, সেসব মিডিয়া বিরোধী দলের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এখন গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে সত্য প্রকাশে ভূমিকা রাখবে।
এ সময় তিনি ভুয়া মামলা প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা কাউকে হয়রানি করতে মামলা দিচ্ছি না। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”