দাবিকৃত টাকা না দিলে দেওয়া হয় মামলা

হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

এফএনএস (মোঃ আমিরুল ইসলাম নয়ন; গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ) : | প্রকাশ: ১২ মে, ২০২৫, ০৬:০২ পিএম
হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

গত কয়েক মাস ধরে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের বিরুদ্ধে দাবিকৃত টাকা না দিলে ওভার স্পিডের মামলা দেওয়ার অভিযোগ করছে এ পথে চলাচলকারী যানবাহন চালকরা। এদিকে গত শনিবার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে এক প্রাইভেটকার চালক একটি ভিডিও পোস্ট করলে তা মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে নানা মহলে, ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিজিয়নের পুলিশ সুপার।

খবর নিয়ে জানা যায়, গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির একটি টহল টিম গত প্রায় তিন/চার মাস ধরে সার্বক্ষণিক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া পাখির মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্পিড গান দিয়ে গাড়ির গতি পরিমাপ করছে। অতিরিক্ত গতিতে চলা যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে তারা। তবে এ পথে চলাচলকারী বেশ কয়েকজন যানবাহন চালক বিষয়টি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি ওভার স্পিড না থাকলেও গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করা হয়। টাকা না দিলে মামলা দেওয়া হয়। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশের কয়েকজন সদস্যকে মাসোহারা দিয়ে অন্তত চার ডজন সিএনজি ও ব্যাটারির চালিত অটোরিকশা মহাসড়কের এই অংশ দাপিয়ে বেড়ালেও তাদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না পুলিশ।

এদিকে শনিবার (১০ মে) বিকালে সরেজমিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া পাখির মোড়ে গিয়ে দেখা যায় দেখা যায় একটি গাড়ি নিয়ে গজারিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কয়েকজন সদস্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। গাড়ির দিকে স্পিড গান তাক করে কয়েকটি যানবাহন থামানো হলো। তবে এসময় তাদের সামনে দিয়ে কয়েকটি সিএনজি ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা যেতে দেখা গেলেও সেগুলো থামানোর ব্যাপারে তাদের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।

ভুক্তভোগী প্রাইভেটকার চালক মোস্তফা কামাল বলেন, ' আমি গজারিয়ার সন্তান, আমার বাড়ি বালুয়াকান্দি গ্রামে। আমি নিয়মিত এই পথে যাতায়াত করি। আমি জানি মহাসড়কের গজারিয়া অংশের বাউশিয়া পাখির মোড়ে ওভার স্পিডে গাড়ি চালালে মামলা দেওয়া হয়। সেজন্য মহাসড়কের এই অংশে আমি গাড়ির গতি ৬০ কিলোমিটারের নিচে রাখি। শনিবার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় একটি দাওয়াত খেয়ে আমি গজারিয়াতে ফেরার পথে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা আমার গাড়ি থামায়। এ সময় তারা আমার কাগজপত্র নিয়ে আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে বলে। আমি তাদের কাছে এর কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকে জানায় আমি নাকি গাড়ি ওভার স্পিডে চালাচ্ছিলাম অথচ এই সময় আমার গাড়ির গতি ছিল ৬০ কিলোমিটারের কম। আমি তাদের বলি মামলা দিলে তো খরচ পড়বে আড়াই হাজার টাকা আপনারা পাঁচ টাকা চাচ্ছেন কেন? তখন তারা আমাকে পনেরো'শো টাকা দিলে মামলা না দিয়ে ছেড়ে দিবে বলে জানায়। আমি তাদেরকে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় তারা মামলা দিয়ে দেয়। শুধু আমি নই যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিবে তাকেই মামলা দিয়ে দেয় তারা'।

ট্রাক চালক হোসেন বলেন, ' কি যে বলবো ভাই,বলার ভাষা নাই। কিচ্ছু না সারাদিন কিছু পুলিশ এখানে দাঁড়িয়ে থেকে গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে থামিয়ে টাকা আদায় করে। টাকা দিলে ছেড়ে দেয় আর যারা টাকা না দেয় তাদের মামলা দিয়ে দেয়'।

স্থানীয় বাসিন্দা কাউসার হোসেন বলেন, ' মহাসড়কের এই অংশে প্রায় ছিনতাই এবং ডাকাতির মত ঘটনা ঘটে। অবাধে তিন চাকার যানবাহন যেমন সিএনজি এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এসব বন্ধে হাইওয়ে পুলিশ সদস্যদের কোন তৎপরতা নেই। তারা চব্বিশ ঘন্টা শুধু পাখির মোড়ে একটা স্পিড গান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে'।

এ পথে নিয়মিত চলাচলকারী দাউদকান্দি ডা. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কলেজের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ' গত কয়েক মাস ধরে এ পথে চলাচলের সময় আমি দেখি হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা একটি গাড়ি নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। একের পর এক গাড়ি আটক করে আবার কিছুক্ষণ পর ছেড়েও দেয়। লোক মারফত শুনেছি টাকা না দিলে নাকি মামলা দেওয়া হয়'।

বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ শওকত হোসেন বলেন,' আমরা যা করছি তা শতভাগ আইন মেনে করছি। যারা ওভার স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে শুধুমাত্র তাদেরকে মামলা দেওয়া হচ্ছে। অযথা গাড়ি থামিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে এমন অভিযোগ সত্যি নয়। একজন ড্রাইভার বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এই সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে আপনারা চাইলে এসে দেখতে পারেন'।

বিষয়টি সম্পর্কে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়নের পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. আ.ক.ম. আকতারুজ্জামান বসুনিয়া বলেন,' বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। যদি ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে'

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে