এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ের পীড়িতে ঝিনাইদহের ২১৩ কিশোরী

এফএনএস (টিপু সুলতান, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ১২ মে, ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
এসএসসি পরীক্ষার আগেই বিয়ের পীড়িতে ঝিনাইদহের ২১৩ কিশোরী

চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝিনাইদহ জেলায় ২১৩ জন কিশোরী বিয়ের পীড়িতে বসেছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি।ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস থেকে পাঠানো জেলার এসএসসি,দাখিল ও ভোকেশনাল পরীক্ষার এক জরিপে বাল্য বিয়ের এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাল্য বিয়ে নিয়ে কাজ করা সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বলছেন, ঝিনাইদহে বাল্য বিয়ে ঠেকানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রশাসনের নজরদারী এড়িয়ে গোপনে কিশোরীদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সমাজে তালাক ও বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ বছর এসএসসি পরীক্ষার আগেই ঝিনাইদহে ২১৩ ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে। এসএসসি পরীক্ষা দেবার জন্য ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষা কেন্ত্রে ছিল অনুপস্থিত।বাল্য বিয়ে প্রতিরোথ কমিটির তৎপরতা থাকলেও বিয়ে ঠেকাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন সংগঠন সরকারের নানা প্রকল্পের টাকা নিয়ে বাল্য বিয়ে ঠেকানোর কর্মসুচি হাতে নিলে ও কোন কাজ হয় না।

ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় বালকের অনুপস্থিতি ছিল ৬৬ জন ও বালিকা রয়েছে ২০৪ জন। এই পরীক্ষায় ২০৪ জন বালিকার মধ্যে অনুপস্থিত ১৭৪ জন কিশোরীর বিয়ে হয়ে গেছে। এছাড়া দাখিল পরীক্ষায় ৩৩ জন ও ভোকেশনাল পরীক্ষায় ৬ জন ছাত্রীর বিয়ের তথ্য পেয়েছে শিক্ষা বিভাগ।

বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান জানান, এসএসসি পরীক্ষার পর বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটির এক সভায় নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে যাওয়ার বিষয়টি তিনি তুলছিলেন। ওই সভায় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিস ৬ উপজেলায় জরিপ চালিয়ে বাল্য বিয়ের এই সত্যতা পান। তিনি বলেন বাল্য বিয়ে রোধ করতে না পারা আমাদের জন্য খুবই র্দুভাগ্যের বিষয়।

ঝিনাইদহ জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সি ফিরোজা সুলতানা বলেন, এই বিয়ের বিষয়ে প্রশাসনের বিন্দুমাত্র গাফলতি নেই। বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কমিটিতে যারা আছেন সবাই খুবই আন্তরিক। কিন্তু গোপনে ও স্থান পরিবর্তন করে বিয়ে দেওয়ার কারণে এ সব খবর আমরা জানতে পারিনি।ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা অফিসার লুৎফর রহমান জানান,বালিকাদের পরীক্ষা কেন্দ্রে গরহাজিরের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা গেছে জেলায় ২১৩ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। জেলা শিক্ষা অফিসের গবেষণা কর্মকর্তা মোছা আফরোজা পারভীন বলেন, জন্ম নিবন্ধনে বয়স বাড়িয়ে গ্রামাঞ্চলে বাল্য বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তখন আমরা জানতে পারি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও কিশোরীকে গোপনে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

২০২৪ সালে ঝিনাইদহ ৬ উপজেলায় ২৫৭ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী বিয়ের পীড়িতে বসে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কিছুটা কমেছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে