এনবিআর বিভাজন নিয়ে কর্মকর্তাদের কলম বিরতির ডাক

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ১৩ মে, ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
এনবিআর বিভাজন নিয়ে কর্মকর্তাদের কলম বিরতির ডাক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে “রাজস্ব নীতি” ও “রাজস্ব ব্যবস্থাপনা” নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ এ অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে তিন দিনের কলম বিরতির ঘোষণা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি থেকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তারা এতে অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) সাধন কুমার কুন্ডু।

তিনি জানান, বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, এবং বৃহস্পতিবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে এই কলম বিরতি।

তবে, আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, রপ্তানি কার্যক্রম ও বাজেট প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট কাজ এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে বলে জানানো হয়েছে, যাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় ধরনের বিঘ্ন না ঘটে।

গত ১৭ এপ্রিল এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করার প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর সোমবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এ অধ্যাদেশ জারি করে। তবে খসড়া প্রকাশের পর থেকেই এনবিআরের দুটি প্রধান ক্যাডার— আয়কর ও শুল্ক—এর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

নতুন অধ্যাদেশের আওতায়:

রাজস্ব নীতি বিভাগে নিয়োগ দেওয়া যাবে আইন, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, প্রশাসন, অডিট, পরিসংখ্যানসহ বিভিন্ন পেশাদার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে সচিব হিসেবে রাজস্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

প্রশাসনিক পদগুলোতে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডার ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডার থেকে কর্মকর্তাদের পদায়নের সুযোগ রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলছেন, এসব বিধান তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত দক্ষতাকে অগ্রাহ্য করে একধরনের অবমূল্যায়ন ও পেশাগত নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নীতি ও প্রশাসনে ভাগ করার ধারণা নতুন নয়। ১৯৯৩ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ২০০৭ সালে বিশ্ব ব্যাংক এ ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতায় তখন তা বাস্তবায়ন হয়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসায়ী মহল, অর্থনীতিবিদ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা এনবিআরের কার্যকারিতা বাড়াতে নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের পৃথক কাঠামোর পক্ষে মত দিয়েছেন।

২০২4 সালের আগস্টে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে সংস্কারের অংশ হিসেবে একটি পাঁচ সদস্যের পরামর্শক কমিটি গঠন করে। এতে প্রশাসন, শুল্ক ও আয়কর ক্যাডারের সাবেক কর্মকর্তারা ছিলেন। কমিটি ডিসেম্বরে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ গঠনের সুপারিশ করে।

সরকারের মতে, আলাদা কাঠামো গঠনের ফলে রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা বাড়বে, স্বচ্ছতা আসবে এবং নীতি-প্রয়োগের মধ্যে স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষা করা যাবে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট ক্যাডারদের দাবি, তাদের মতামত উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, যা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে সংকট তৈরি করতে পারে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এক নেতা বলেন, “আমরা সংস্কারের বিপক্ষে নই, কিন্তু এভাবে কাঠামো ভেঙে আমাদের পেশাগত ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেওয়া হবে না।”

নতুন কাঠামোতে প্রশাসন ক্যাডারকে অগ্রাধিকার দেওয়া নিয়ে এনবিআরের অভ্যন্তরে এক ধরনের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকদের দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা ও উভয়পক্ষের মতামত বিবেচনা করেই সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছানো জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে