চিরিরবন্দরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও ড্রাম ট্রাকে করে পরিবহনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করায় জেলা ছাত্রলীগের নেতা কতৃক মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়ে ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এলাকার কিছু নিরীহ মানুষ।
মামলার এজাহারসুত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর জেলা ছাত্রলীগ নেতা আজমাঈন কবির উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কুশলপুর বালু মহাল বাংলা-১৪২৯ সালে ১ বছরের জন্য লীজ প্রাপ্ত হয়ে বালু উত্তোলন করে ড্রাম ট্রাকে করে পরিবহন করছিলেন। কুশলপুর ও চিরিরবন্দর সড়কের চড়কডাঙ্গা বাজারে স্থানীয় জনতা, কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিলে গাড়ী চলাচলে বাধা প্রদান করে মারধর এবং চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় চিরিরবন্দর থানায় ২০২৩ সালের ১৯ এপ্রিল ১১ জনকে নামীয় ও অজ্ঞাত ১০/১৫ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
উক্ত বালু মহাল ইজারার বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা প্রশাসক অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিসে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, কুশলপুর বালুমহালটি সরকারিভাবে বাংলা ১৪২৯ সালে ইজারাই দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতেও কোন নথিপত্র পাওয়া যায়নি।
চিরিরবন্দর উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলা ১৪২৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বালুঘাট সরকারি ভাবে ইজারা দেয়া হয়নি। অনেকটা জোর করে অবৈধভাবে কতিপয় লোক বালু ব্যবস্যা করত। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কয়েকবার জরিমানাও করা হয়েছে।
মামলার আসামী পূর্ব সাইতাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন-ওই বালুঘাটটি অবৈধভাবে দিনাজপুরের এক নেতা চালাত। স্কুলের পাশ দিয়ে ড্রাম ট্রাকে করে দিনরাত বালু পরিবহন করত। প্রচন্ড ধূলাবালি ও রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রতিবাদ স্বরুপ স্থানীয় এলাকাবাসি ও আশেপাশের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলেসহ পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসন বালু পরিবহন বন্ধ করে দেয়। কয়েকদিন পর জানতে পারি তাকেসহ আরো ১০ জনকে ও অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও চারণ কবি সরকার নির্মল চন্দ্র সরকার বলেন-এলাকাবাসিসহ ছাত্ররা মিলে মানববন্ধন করা হলো, প্রশাসন বালুর ট্রাক বন্ধ করল, কোনকিছু ঘটলই না। অযথা হয়রানি করতে এলাকাবাসির নামে মিথ্য মামলা করা হল। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বালুঘাট অবৈধভাবে চালাত। অবৈধ ইজারাদার হয়েও দলীয় প্রভাব খাঁটিয়ে মিথ্যা মামলাটি করেছে।
মামলার আরেক আসামী আব্দুস সামাদ উক্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন-মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কমল চন্দ্র রায় চার্জশীট থেকে নাম বাদ দিতে অনেক টাকা দাবি করেন। যেখানে কোন কিছু ঘটেইনি, সেখানে কেন টাকা দিব ? এ কথা বলাতে কোন তদন্ত না করেই চার্জশীট প্রদান করেছে। মামলার বাদি গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থেকে মামলা না চালানোর জন্য একটি এফিডেভিট করে দিয়েছেন, কিন্তু গ্রেফতারের ভয়ে আদালতে হাজির হচ্ছেন না। আদালতে বার বার তারিখ পড়ছে। আমরা গরীব মানুষ, কষ্ট করে মামলা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।
পুর্ব সাইতাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন- উক্ত মিথ্যা মামলা তুলে নেয়া না হলে, আবারো রাস্তায় মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
সাঁইতাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা সন্তোষ কুমার রায় বলেন, উক্ত বালু মহাল ইজারা ছিলনা। জেলার নেতারা প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে জোর করে চালাতেন। স্থানীয় জনগণ ও ছাত্র ছাত্রীরা মানববন্ধন করে বালু পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। এলাকাবাসির বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা।
এ ব্যাপারে মামলার বাদির বক্তব্য নিতে তার সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে বাড়িতেসহ সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি জায়গায় গিয়েও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার অবস্থান জানতে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার শরণাপন্ন হলে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মতিউর রহমান জানান, ওই ছাত্রলীগ নেতা লাপাত্তা। মামলা যেহেতু চিরিরবন্দরে রুজু হয়েছে, তাই বাদির বিষয়ে জানতে হলে চিরিরবন্দর থানায় যোগাযোগ করতে হবে।