ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার জোড়বাংলা মসজিদের পাশে গ্রন্থাগারটি শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণের জ্ঞান পিপাসা মেটাতে এক ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক জোড়বাংলা মসজিদের সন্নিকটে স্থাপিত এই গ্রন্থাগারটি গড়ে তুলেছেন আলমগীর হোসেন, যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে তিলে তিলে এ প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করিয়েছেন। আলমগীর বারবাজার গ্রামের মৃত আলতাফ হোসেনের ছেলে। প্রায় সাড়ে ৮ হাজার বিভিন্ন ধরনের বই নিয়ে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগারটি এখন এলাকাবাসীর কাছে একটি জ্ঞানের আলোকবর্তিকা এবং সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত।
আলমগীর হোসেনের মূল লক্ষ্য ছিল বইয়ের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ সৃষ্টি এবং তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা। তিনি জানান, বারবাজার ইতিহাস ঐতিহ্যের পূণ্যভূমি; এখানে রয়েছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও সুলতানি আমলের মসজিদ, যা মাটি খুঁড়ে পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এসব ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি সমাজ সংস্কারের আলো ছড়ানোই তার মূল উদ্দেশ্য।
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পাঠকরা এখানে বই নিতে আসে। হাট বারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারবাজার ডিগ্রি কলেজ, শমশেরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কিশোর-কিশোরী,বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে নিয়মিত বই পড়তে অংশ নেয়। গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে বাড়িতে পড়ার সুযোগ রয়েছে।এছাড়াও গ্রন্থাগারটি বিভিন্ন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মাধ্যমে মানবিক চেতনা, ইতিহাস সংরক্ষণ এবং প্রতিভার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসে প্রবন্ধ, রচনা, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়, যা জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সহায়ক।
মেধাবী ও গরীব শিক্ষার্থীদের মাঝে এককালীন বইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ প্রদান, আর্থিক অনুদান, বয়স্ক মহিলা ও শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, দর্জি বিজ্ঞান, নকশিকাঁথা সেলাই প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও পরিচালনা করা হয়। গ্রন্থাগারের সদস্যগণ রাতের স্কুল স্থাপন এবং বেকার যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছেন।
বারোবাজার গ্রন্থাগারটি শুধু পাঠাগারই নয়, এটি এলাকাবাসীর ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণের কেন্দ্রও। প্রাচীন মসজিদ, শিলালিপি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলো সংরক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে লাইব্রেরিটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তাদের শিকড়ের সাথে পরিচিত করার একটি প্রচেষ্টা।হাট বারবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র ইমতিয়াজ হোসেন জানান,আমি প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় লাইব্রেরিতে আসি। বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা পড়ি এবং বই নিয়ে বাসায় পড়ি, যা আমার জ্ঞান অর্জনে অনেক সহায়ক।স্থানীয় বাসিন্দা কাজী শাহজাহান হোসেন (৬৫) বলেন, আমি নিয়মিত এই গ্রন্থাগারে গিয়ে পত্রিকা পড়ি, বই নিয়ে আসি। আলমগীর ভাই অক্লান্ত পরিশ্রম করে গ্রন্থাগারটি টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি একাই এই ঐতিহ্যবাহী স্থানের ইতিহাস সংরক্ষণের কাজ করে যাচ্ছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
হাট বারাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলনে, পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার হচ্ছে লাইব্রেরি। জ্ঞান অর্জনের জন্য লাইব্রেরির কোন বকিল্প নইে। শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষের মাঝে পাঠ্য অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য লাইব্রেরি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। আলমগীর হোসেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে তেমন একটি লাইব্রেরি গড়ে জ্ঞান র্অজন ও এলাকার ইতিহাস ঐত্যিহ্য সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্ট করছেন। তার এ কাজটি সত্যিই প্রসংশার দাবি রাখে।
কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য এমন গ্রন্থাগার খুবই প্রয়োজন। আমি বারবাজার লাইব্ররির কথা জানি এবং ইতোমধ্যে সরকারি ভাবে অনুদান প্রদান করেছি। ভবিষ্যতে গ্রন্থাগারের উন্নয়নে আরো সহযোগিতা প্রদান করা হবে। তিনি আরো বলেন, আলমগীর হোসেনের নিরলস প্রচেষ্টা, প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং শিক্ষার আলো ছড়ানোর এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তার মতো অন্যান্যদেরও এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।