জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গণমাধ্যমের হালচাল’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি জানান, খুব শিগগিরই সাংবাদিকদের জন্য নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। একইসঙ্গে তিনি স্বচ্ছতা, দায়িত্বশীলতা এবং নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন।
শফিকুল আলম বলেন, “আগে অনেক ক্ষেত্রে এমপি, দলীয় লোকজন এমনকি ছাত্রনেতারাও অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পেতেন। এখন শুধুমাত্র প্রকৃত সাংবাদিকরাই এই কার্ড পাবেন।” তিনি জানান, আগে ১৬৭টি কার্ড বাতিল করা হলেও তা ছিল একটি ‘ভুল সিদ্ধান্ত’। বর্তমান সরকার নতুন কমিটি ও নীতিমালা করেছে, যাতে গণমাধ্যমবান্ধব ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা যায়।
প্রেস সচিবের ভাষ্য অনুযায়ী, গত নয় মাসে সরকার কোনো সাংবাদিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেনি, এবং যেসব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তা সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, “এগুলো তদন্তাধীন। যাদের হয়রানি করা হয়েছে, তাদের মামলাকারীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি এটিও উল্লেখ করেন, “চাকরিচ্যুতির পেছনে মালিকপক্ষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত কাজ করেছে, সরকারের কোনো চাপ ছিল না।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রেস সচিব বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত মত প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। ভুল তথ্য মানুষের ক্ষতি করতে পারে এবং একজন সাংবাদিকের প্রতি মানুষের বিশ্বাস নষ্ট করতে পারে।”
তিনি পরামর্শ দেন, প্রতিটি গণমাধ্যমের একটি ‘সোশ্যাল মিডিয়া গাইড’ থাকা উচিত, যেন সংবাদ পরিবেশনের সময় পেশাগত পরিচয় ও ব্যক্তিগত মতের পার্থক্য বজায় রাখা যায়।
বর্তমান সাংবাদিকতার আর্থিক দুরবস্থা প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “কয়েকজন উচ্চপদস্থ সাংবাদিক বাদে বেশিরভাগ সাংবাদিকের বেতন অপ্রতুল। সাংবাদিকতার পেশাগত মর্যাদা বজায় রাখতে কপিরাইট রক্ষা, ন্যায্য বেতন নিশ্চিত এবং টেকসই অর্থনৈতিক মডেল তৈরি করা জরুরি।”
আলোচনায় শফিকুল আলম দাবি করেন, “বিগত নয় মাসে গণমাধ্যম অভূতপূর্ব স্বাধীনতা ভোগ করছে। তথ্য মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের কাজের ওপর কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হয়নি।”
তিনি বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে স্বাধীনতা মানেই দায়িত্বহীনতা নয়।”
গণমাধ্যমের ওপর জনআস্থার সংকট মোকাবেলায় প্রেস সচিব বলেন, “বিগত সময়গুলোতে কিছু ভুল হয়েছে, তা সাহস করে স্বীকার করতে হবে। পুরোনো ‘ফ্যাসিস্ট মানসিকতা’ থেকে বের হয়ে এসে সত্যিকারের সাংবাদিকতার চর্চা শুরু করলেই মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।”