ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ‘ভালো মশা’-বিজ্ঞান নির্ভর সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন

এফএনএস | প্রকাশ: ১৫ মে, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে ‘ভালো মশা’-বিজ্ঞান নির্ভর সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখন

বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ প্রতি বছরই একটি বড় জনস্বাস্থ্য সংকট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে রোগী ভর্তি হচ্ছে, বাড়ছে উদ্বেগ। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক গবেষণায় উৎসাহব্যঞ্জক এক অগ্রগতির খবর দিয়েছে আইসিডিডিআর,বি। তারা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু রোধে পরীক্ষাগারে প্রস্তুতকৃত ‘উলবাকিয়া-সংক্রমিত এডিস মশা’-যাকে সাধারণত ‘‘ভালো মশা’’ বলা হচ্ছে-ঢাকার পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। এটি মশাবাহিত ভাইরাস প্রতিরোধে দেশে একটি বৈজ্ঞানিক ও জৈবিক সমাধানের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো এডিস মশার কীটনাশক প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নগরজীবনের অনিয়মিত পানি জমে থাকা, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এর ফলে প্রচলিত মশা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কার্যকারিতা দিন দিন কমছে। ফলে, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর সমাধান নয়। এই প্রেক্ষাপটে ‘উলবাকিয়া কৌশল’ বৈজ্ঞানিকভাবেই সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি মূলত দুটি পদ্ধতিতে কাজ করে-এক, দমন কৌশল, যেখানে উলবাকিয়া আক্রান্ত পুরুষ মশা ছাড়া হয়, ফলে স্ত্রী মশার ডিম নিষ্ক্রিয় থাকে; এবং দুই, প্রতিস্থাপন কৌশল, যেখানে উলবাকিয়া আক্রান্ত স্ত্রী মশা প্রজন্মান্তরে এই ব্যাকটেরিয়া বহন করে এবং ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষমতা হারায়। বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই পদ্ধতির সফল প্রয়োগ ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সতর্কতা জরুরি। যেকোনো জৈবিক হস্তক্ষেপে পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা স্বয়ং বলছেন, এ পদ্ধতি মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের আগে পর্যাপ্ত পরীক্ষানিরীক্ষা, জনসচেতনতা ও সরকারি নীতিগত সমন্বয় অপরিহার্য। মানুষকে আগে জানাতে হবে-এই ‘‘ভালো মশা’’ কামড়াবে না, রোগ ছড়াবে না, বরং বিপরীতভাবে সংক্রমণ রোধে কাজ করবে। আমাদের সুপারিশ, সরকারকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নে। ঢাকার এক বা একাধিক ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে এই কৌশল চালু করে তার প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে এই উদ্যোগকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি, নাগরিকদের আস্থা অর্জনের জন্য প্রচার ও জনসংযোগ কার্যক্রম অত্যন্ত জরুরি। ডেঙ্গু শুধু একটি  মৌসুমি সমস্যা নয়-এটি এখন একটি ঘন ঘন ফিরে আসা মহামারির রূপ নিচ্ছে। তাই প্রতিবার রোগী গুনে গুনে ভয় পাওয়ার বদলে এবার সময় এসেছে বিজ্ঞাননির্ভর, টেকসই সমাধানে এগিয়ে যাওয়ার।