বরাদ্দের বিপুল পরিমান অর্থ নয়-ছয়ের আশঙ্কা

তানোরে বিনোদপুর খাল সংস্কারে পুকুর নয়, যেন সাগর চুরি

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী : | প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম
তানোরে বিনোদপুর খাল সংস্কারে পুকুর নয়, যেন সাগর চুরি
রাজশাহীর তানোরে সরকারি এক খাল (খাড়ি) সংস্কারে পুকুর নয়, যেন সাগর চুরি করা হচ্ছে। এমন আশঙ্কায় স্থানীয়দের মাঝে চরমক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। অবিলম্বে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসি। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির বিনোদপুর বাজার ব্রীজ থেকে পশ্চিমে ৮০০ মিটার। আর পূর্বে তালন্দ ইউপির লালপুর খাড়ি পর্যন্ত ৮০০ মিটার। মোট ১৬’শ মিটার ওই খাল (খাড়ি) সংস্কারের কাজ হাতিয়ে নেয় এসকেএস নামক এক ফাউন্ডেশন সংস্থা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পিকেএসএফ পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন মাধ্যমে অর্থ ছাড়ে মূলত খড়া মোকাবেলায় প্রজেক্টটি তৈরি করা হয়। এতে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে মার্চ মাসের প্রথমে টেন্ডার আহবান করে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিধিমতে ২৭ মার্চ খাল সংস্কার কাজ উদ্বোধন করেন ইউএনও লিয়াকত সানমান। সিডিউল অনুযায়ী এ খাল সংস্কার কাজের গড় প্রস্থ ২৬ ফিট, গভীরতা ১১ ফিট ও দৈর্ঘ্য ১৬০০ মিটার নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দেখভাল উদাসিনতায় ভেকু মেশিন দিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে খাড়িটি সিডিউলের অর্ধেক পরিমান সংস্কার কাজ করছে সংস্থাটি। এতে করে সরকারের মহতি উদ্যোগ ভেস্তে যেতে বসেছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, খালটির খনন কাজ হচ্ছে না যথাযথভাবে। কেবলমাত্র নিয়মরক্ষার খাতিরে অল্প পরিসরে খালের দু’ধার চেছে সমান করা হচ্ছে। যার ফলে প্রকল্পটির উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ১৭ মে শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই খালটির পূর্বের গভীরতা ছিল অন্তত ৭/৮ ফিট। কিন্তু বর্তমানে পূর্বের ন্যায়ে লোক দেখানোর জন্য খালের তলা ও দু’ধার সামান্য চেছে কাজ করা হচ্ছে। এভাবে খাল সংস্কার করা হলে এক সময় এটি যেন একটি ড্রেনে পরিণত হবে। যার ফলে ওই খালে পানি প্রবাহে গতিরোধ হবে এমনটি বলছেন এলাকার সচেতন মহল। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন, এই খালটি সংস্কারে শুধু পুকুর চুরি নয়, বরং অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে সাগর চুরি হচ্ছে আমাদের চোখের সামনে। খালটি একসময় ছিল এলাকাবাসীর জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসন, কৃষিকাজে সেচ এবং গ্রামীণ জীবনে নানান উপকারে এই খালটি ব্যবহার হতো। কিন্তু বর্তমানে খালটির যথাযথ সংস্কার না হওয়ার কারণে তার কার্যকারিতা হারাতে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের অসন্তোষ তুঙ্গে। তারা বলছেন, এতো বড় একটি প্রকল্প কীভাবে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা তাদের বোধগম্য নয়। স্থানীয় প্রশাসনেরও কোনো তদারকি নেই বলেই মনে করছেন তারা। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য উদঘাটনের পাশাপাশি দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারা রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তদন্ত না হলে খালের ভবিষ্যৎ কী? খালটির খনন কাজ সঠিকভাবে না হলে এটি ভবিষ্যতে সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়বে, যা কেবলমাত্র স্থানীয় কৃষিকাজই নয়, বরং পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এসকেএস ফাউন্ডেশনের রাজশাহীর তানোরের প্রজেক্ট কো-অডিনেটর আরাফাত ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পরে ওই ফাউন্ডেশনের কমিউনিটি মোবিলাইজেশন অফিসার অনুপ কুমার মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিনোদপুর খাড়ি সংস্কার কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন ফিনিসিং কাজ চলছে, অফিসে আসেন কথা হবে বলে এড়িয়ে গেছেন অনুপ কুমার মন্ডল। এব্যাপারে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, ওই খাল সংস্কার কাজ উদ্বোধনের পর আমার আর খোঁজ নেয়া হয়নি। যদি খাল খনন সংস্কারে অনিয়ম হয়ে থাকে আগামী দু’য়েক দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান ইউএনও। ই/তা
0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে