তৃতীয় বিভাগ, গঠনতন্ত্র ও আর্থিক লেনদেন ঘিরে জোরালো অনুসন্ধান

বিসিবিতে আবার দুদকের অভিযান

এফএনএস স্পোর্টস | প্রকাশ: ১৭ মে, ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
বিসিবিতে আবার দুদকের অভিযান

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আবারও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরে। গত এক মাসে দ্বিতীয়বারের মতো সংস্থাটির তদন্ত দল মিরপুরের শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিসিবি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে। শনিবার (১৭ মে) দুপুরে রাজু আহমেদের নেতৃত্বে দুদকের চার সদস্যের একটি দল বিসিবিতে উপস্থিত হয় এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে তদন্ত কার্যক্রম চালায়।

এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল-তৃতীয় বিভাগের দল নির্বাচনে অনিয়ম, বিসিবির গঠনতন্ত্রে অসঙ্গতি এবং আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত। দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আজকে তৃতীয় বিভাগের বাছাই প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, বিসিবির গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসেছি। বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেছি, পর্যালোচনা করেছি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি।”

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল প্রথমবার বিসিবিতে অভিযান চালায় দুদক। তখন তারা বিপিএলে টিকিট বিক্রির পদ্ধতি এবং তৃতীয় বিভাগের বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এবারের অভিযানটি পরিচালনা করেছে ভিন্ন একটি দল, যাদের তদন্তের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত। রাজু আহমেদ বলেন, “আমাদের আগের দলের সঙ্গে মিল নেই। আমরা গঠনতন্ত্রের বৈধতা, চাকরির নীতিমালা, আর্থিক লেনদেনসহ নানা বিষয় যাচাই করছি।”

তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিসিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, ২০২২ সাল থেকে অংশগ্রহণের শর্ত কঠিন করা হয়েছে। এন্ট্রি ফি পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণসহ কিছু প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে, যা প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিষয়টি নিয়ে সিসিডিএমের (ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিস) কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্যও চেয়েছে দুদক।

বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়েও অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। অভিযোগ রয়েছে, বিসিবির গঠনতন্ত্র যথাযথ আইনি কাঠামোর মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে না এবং আদালতের একটি রায়ের পর সংশোধিত হলেও এখনও কিছু গ্যাপ রয়ে গেছে। রাজু আহমেদ বলেন, “চাকরির কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, ফলে প্রতিষ্ঠান কাঠামোগতভাবে দুর্বল। কেন এমন নীতিমালা তৈরি হয়নি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী-সেসব আমরা খতিয়ে দেখছি।”

সম্প্রতি বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম না মেনে বোর্ডের এফডিআরের অর্থ এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টিও দুদক গভীরভাবে পর্যালোচনা করছে। অভিযানের দিন বিসিবি কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি ফারুক আহমেদ। দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তার সঙ্গে তারা আলোচনা করবেন।

এর আগে বিসিবির সাবেক পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মোট ২৭টি বিষয়ে অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুদক। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলে স্টেডিয়াম নির্মাণে পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগপ্রক্রিয়া, আয়-ব্যয়ের অডিট প্রতিবেদন, আইসিসি ও এসিসির লভ্যাংশ ভাগাভাগির নীতিমালা, বিদেশি কোচ নিয়োগের কাগজপত্র, লজিস্টিকস ও প্রটোকল ব্যয়ের বিবরণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।

অভিযানের পর রাজু আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, “এই তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। আরও তথ্য সংগ্রহ ও সাক্ষাৎকার নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিষয়টি সর্বাঙ্গীনভাবে মূল্যায়ন করেই পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”