শাহজালালের ওরসে আধ্যাত্মিক মিলন মেলা: ভক্তবৃন্দে মুখরিত সিলেটের পুণ্যভূমি

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম, সিলেট) : | প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
শাহজালালের ওরসে আধ্যাত্মিক মিলন মেলা: ভক্তবৃন্দে মুখরিত সিলেটের পুণ্যভূমি

সিলেটের পুণ্যভূমিতে শুরু হয়েছে ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ৭০৬তম বার্ষিক ওরস মোবারক। ভক্তবৃন্দের গিলাফ ছড়ানোর মধ্য দিয়ে আজ সকালে এই দুই দিনব্যাপী আধ্যাত্মিক উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়, যা মাজারের শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সকালের প্রথম প্রহর থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা হাজারো আশেকান মাজার প্রাঙ্গণে ভিড় জমান। ‘আল্লাহু, আল্লাহু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত দরগাহ চত্বর পরিণত হয়েছে এক অপার্থিব পরিবেশে। জিকির, দরুদ আর দোয়ার শব্দে আকাশ-বাতাস মুখরিত। গভীর রাতে বিশেষ জিকির মাহফিল এবং আগামীকাল ভোররাতে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই পবিত্র ওরসের পরিসমাপ্তি ঘটবে। মোনাজাতে দেশের শান্তি, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং বিশ্ব মানবতার কল্যাণ কামনা করা হবে।

ওরস ঘিরে দরগাহ এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক আনন্দঘন উৎসবের আমেজ। বসেছে নানা ধর্মীয় পণ্যের স্টল, খাবারের দোকান, লাল-সবুজে সাজানো গিলাফ ও ফুলে মোড়ানো মাজার। ভক্তদের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন শত শত স্বেচ্ছাসেবক, যারা নিরাপত্তা, সুশৃঙ্খল চলাচল ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ভূমিকা রাখছেন। প্রশাসনও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে।

এবারের ওরসে বিশেষ আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী ‘লাকড়ি তোলা’ উৎসব। হাজারো ভক্ত লাক্কাতুরা চা বাগান থেকে কাঠ সংগ্রহ করে তা মাজার প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন। এই কাঠ দিয়ে রান্না করা হবে বিশেষ শিরনি, যা ওরস শেষে সকল ভক্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যা তাদের কাছে বরকতময় এক স্মারক।

মাজারের পবিত্রতা রক্ষায় তাওহিদি জনতা ও বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠন একজোট হয়ে শিরক-বিদআত, অশ্লীলতা, গান-বাজনা ও মাদকবিরোধী প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত গণসংযোগ, প্রশাসনিক স্মারকলিপি প্রদান ও বিভিন্ন মহলের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করছে।

ইতিহাস বলছে, হযরত শাহজালাল (রহ.) ১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩৬০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সিলেটে আগমন করেন। তার আগমনেই সিলেটে ইসলাম প্রচার কার্যক্রমের সূচনা ঘটে। ১৩৪৬ সালের ১৯ জিলকদ তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর পবিত্র মাজারে সারা বছরই থাকে ভক্তদের অবিরাম উপস্থিতি, আর ওরস মোবারক যেন সেই ভালোবাসার এক মহা বিস্ফোরণ।

এই ওরস শুধুই একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। এটি ভালোবাসা, ভক্তি এবং মানবিক বন্ধনের এক অনন্য মিলনমেলা, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে আসা মানুষ একত্রিত হন হৃদয়ের টানে, বিশ্বাসের ডাকে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে