টানা পাঁচ মাস সম্মানি বন্ধ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদ ভিত্তিক মক্তব শিক্ষকদের। এ সব শিক্ষকের অধিকাংশ বিভিন্ন মসজিদের ইমাম। পাঁচ মাস সম্মানি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এরপর ঘোষণা আসে বকেয়া ওই পাঁচ মাসের সম্মানি ইসলামিক ফাউন্ডেশন আর কাউকে দিবে না। এ ধরনের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন কর্মরতরা। সারাদেশে ঘোষণা করেন কর্মসূচি। তারই অংশ হিসেবে শনিবার খুলনার জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি ও মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচিতে যোগ দিতে খুব সকালে জেলা শহর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের উপকূলীয় জনপদ কয়রা থেকে রওয়ানা দেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ছয় জন শিক্ষক। পথে তারা যাত্রাবিরতি করে নাস্তা সারেন। সেটি আবার ফেসবুকেও দেন তাদের একজন। ওই নাস্তা-চা পান যে তিন জনের শেষ নাস্তা হবে সেটিইবা কে জানতো! কয়রা থেকে ছয়জনকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে ছুটে চলে মাহেন্দ্র। পথিমধ্যে সকাল সাড়ে ১০ টায় ডুমুরিয়ার গোলনা রাহাবাড়ির সামনে থেমে যায় মাহেন্দ্রের গতি। একটি তেলবাহী ট্যাংকলরি মাহেন্দ্রটিকে সামনে থেকে আঘাত করে। মুহূর্তে সব শেষ! ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনজন। এদের দুইজন ইমাম ও একজন মাহেন্দ্রের চালক। বাকি চারজন আহত হন। তাদের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত চারজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিহত তিন জনের বাড়ি-ই কয়রার বিভিন্ন গ্রামে। এ ছাড়া আহত ৪ জনই সবাই মসজিদের ইমাম। এই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতরা হচ্ছেন, কয়রা উপজেলা সদরের হজরত আবু বক্কর (রা.) জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাইনুল ইসলাম (৩৬)। তিনি ২ নম্বর কয়রা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে। অপর দুই জন হচ্ছেন,বাগালী ইউনিয়নের কুশোডাঙ্গা গ্রামের মৃত নুর আলী সানার (নুরু দর্জি) ছেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহেশ্বরীপুর, আমাদী ও বাগালী ইউনিয়নের সাধারণ কেয়ারটেকার মাওলানা আব্দুর রশিদ সানা (৫০) ও আমাদী ইউনিয়নের ভান্ডারপোল গ্রামের আনছার আলীর ছেলে মাহেন্দ্র চালক রফিকুল ইসলাম (৪৫)। আহতরা হচ্ছেন,উপজেলার হোগলা বাজার জামে মসজিদের ইমাম আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া এলাকার আফিল উদ্দিনের ছেলে ইউনুছ আলী (৪৫), মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের চৌকুনী গ্রামের মতলেব সানার ছেলে বাবুরাবাদ জামে মসজিদের ইমাম মইনুল ইসলাম (৪৪), কয়রার জান্নাতুলবাকী জামে মসজিদের ইমাম কয়রা উত্তরচকের মোহাম্মদ আলী মোড়লের ছেলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহারাজপুর ও কয়রা সদর ইউনিয়নের সাধারণ কেয়ারটেকার হাফেজ মনিরুল ইসলাম (৩৭) ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খেজুরবাগ নুরানী মক্তবের শিক্ষক আব্দুস ছাত্তার (৪৫)। নিহত মইনুলের চাচা আতিয়ার রহমান সানা বলেন, ১৭ মে সকালে কয়রা থেকে তারা মাহেন্দ্রটি নিয়ে খুলনার ডিসি অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার রাহাবাড়ির কাছে পৌঁছালে বিপরীত দিক দিয়ে আসা তেলবাহী ট্যাংকলরি (যশোর ঢ ৪১-০০০৪) সামনে থেকে আঘাত করে মাহেন্দ্রটিকে। এতে দুমড়েমচড়ে যায় এটি। ঘটনাস্থলেই নিহত হন চালক সহ তিনজন। খর্ণিয়া হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের এসআই শিমুল মন্ডল জানান, দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন রাস্তার পাশে খাদে তেলবাহী ট্যাংকলরি এবং অপরপাশে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া মাহেন্দ্রটি পড়ে রয়েছে। আর রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে একটি মরদেহ। এরপর হাসপাতালে গিয়ে আরও দুইজনের মরদেহ দেখেন। আহত আরও চারজনকে খুমেক হাসাপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে,একসাথে তিন জনের মৃত্যুতে গোটা কয়রা উপজেলা জুড়ে শোকের সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে সম্পৃক্তরা তিন জনের মৃত্যুকে কোনোভাবেই মানতে পারছেন না। হজরত আবু বক্কর মসজিদের ইমাম হাফেজ মইনুল ইসলামের সুললিত কণ্ঠের তেলোয়াতের কথা মুসল্লিরা বারবার উল্লেখ করে আফসোস করছেন। ঐ দিন শনিবার এশাবাদ হাফেজ মইনুলের জানাযার নামাজ মদিনবাদ মডেল সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জানাযায় হাজার হাজার ধর্মপ্রান মুসলমানরা অংশ গ্রহন করেন। পরে তার পারিবারিক কবরস্থান ২নং কয়রা গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়।