দেশের বৈদেশিক আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহে চলমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের প্রথম ১৭ দিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৬১ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৯ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। এই গতি বজায় থাকলে চলতি মাসেই রেমিট্যান্স ছাড়িয়ে যেতে পারে ৩০০ কোটি ডলারের (৩ বিলিয়ন ডলার) রেকর্ড, যা হবে দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্তির নতুন মাইলফলক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রোববার (১৮ মে) পর্যন্ত মে মাসের ১৭ দিনে প্রতিদিন গড়ে এসেছে প্রায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার বা ১১৫৫ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স।
মে মাসের প্রথমার্ধে যে ১৬১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, তার উৎস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—
• রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৯ কোটি ৩৩ লাখ ডলার
• বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক-এর মাধ্যমেই এসেছে ১৫ কোটি ডলারের বেশি
• বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে সবচেয়ে বেশি—৯৬ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার
• বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩১ লাখ ৩০ হাজার ডলার
তবে দুঃখজনকভাবে, মে মাসের প্রথম ১৭ দিনে ৯টি ব্যাংক এক টাকাও রেমিট্যান্স আনতে পারেনি। এর মধ্যে রয়েছে—
• বিশেষায়িত ব্যাংক: রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক
• বেসরকারি ব্যাংক: কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেন্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক পিএলসি
• বিদেশি ব্যাংক: হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্সে উল্লেখযোগ্য গতি লক্ষ করা যাচ্ছে। গত কয়েক মাসে রেমিট্যান্সের চিত্র ছিল এমন:
• জুলাই: ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার
• আগস্ট: ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার ডলার
• সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি ৪১ লাখ ডলার
• অক্টোবর: ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার
• নভেম্বর: ২২০ কোটি ডলার
• ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি ডলার
• জানুয়ারি: ২১৯ কোটি ডলার
• ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি ডলার
• মার্চ: ৩২৯ কোটি ডলার (এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ)
• এপ্রিল: ২৭৫ কোটি ডলার
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রবাসী আয় বাড়ার এই ধারা অর্থনীতির জন্য এক সুসংবাদ হয়ে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেমিট্যান্স বাড়ার পেছনে প্রণোদনা ব্যবস্থা, হুন্ডি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয়ে উৎসাহ দেওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।