শেখ হাসিনার হলফনামা ও সম্পদে গড়মিল পাওয়া গেছে, মামলা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৮ মে, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম
শেখ হাসিনার হলফনামা ও সম্পদে গড়মিল পাওয়া গেছে, মামলা হবে: দুদক চেয়ারম্যান

মৌলভীবাজার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রোববার (১৮ মে) অনুষ্ঠিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ১৭৫তম গণশুনানিতে উঠে এলো বিস্ময়কর সব বক্তব্য ও অভিযোগ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনি হলফনামায় প্রদত্ত সম্পদের বিবরণীর সঙ্গে বাস্তব চিত্রের গড়মিল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।”

চেয়ারম্যান আরও জানান, শেখ হাসিনার বোন ও সন্তানের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা কেবল অভিযোগ নয়, প্রমাণিত দলিল-দস্তাবেজের ভিত্তিতে কাজ করি। আমাদের তদন্ত নির্ভর করে তথ্য ও আইনের ওপর।”

এদিন গণশুনানিতে অংশ নিয়ে ড. মোমেন বলেন, “দুর্নীতি সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে। দুর্নীতি যত কমবে, সমাজে ততই সমতা আসবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা সবাই নিজের অজান্তে বা সচেতনভাবেই ঘুষের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছি, এটা বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতি কমাতে হলে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”

তিনি জানান, দুর্নীতির দুটি দিক রয়েছে—ডিমান্ড ও সাপ্লাই। ঘুষ চাওয়াটাই শুধু অপরাধ নয়, ঘুষ দেওয়া থেকেও দুর্নীতি শুরু হয়। “প্রথমেই সাপ্লাই সাইট অর্থাৎ ঘুষদাতাদের রোধ করতে হবে, তাহলেই ডিমান্ড বন্ধ হয়ে যাবে,” বলেন তিনি।

চেয়ারম্যান মোমেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “দুদকের চেয়ারম্যান বলে হলেও আমার বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে ধরবেন। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পর যেমন ভুয়া সমন্বয়ক দেখা দিয়েছে, তেমনি ভুয়া দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু করা উচিত।”

গণশুনানিতে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাফিজ আহসান ফরিদ, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং দুদকের হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এরশাদ মিয়া।

গণশুনানির অংশ হিসেবে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৫ দিন ধরে বুথ স্থাপন, মাইকিং ও পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই শুনানিতে ১৮টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে মোট ৫৮টি অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। এর মধ্যে হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি অনুসন্ধানে নেওয়া হয় এবং ১১টি অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দুদক কমিশনার হাফিজ আহসান ফরিদ বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, কিন্তু এককভাবে এই যুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব নয়। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই এই যুদ্ধে নামতে হবে। নিজের অবস্থান থেকে ঘুষ না দেওয়া, প্রতিবাদ করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়াটাই প্রথম পদক্ষেপ।”

চেয়ারম্যান আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত জেলা হিসেবে ভবিষ্যতে মৌলভীবাজার দেশসেরা হবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে