জামালপুরের বকশীগঞ্জে জেগে উঠা নদ নদীর জলভাগ ও স্থলভাগ থেকে বালু ও মাটি হরি লুটের মহোৎসব চলছে। জেগে উঠা বিভিন্ন নদ-নদীর জলভাগ থেকে যন্ত্র দানব খ্যাত ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন আর স্থলভাগের ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়তই মাটি হরিলুটের দৃশ্য এখন নিত্য দিনের ঘটনা।
উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের পরও কোন ক্রমেই থামছে না ওই বালু হরিলুট। এই বালু দস্যুেদর খুটির জোর কোথায় এনিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ, দশানী নদী ও জিঞ্জিরাম নদীর তীরে অবস্থিত বকশীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। বর্ষাকালে এসব নদ নদী যৌবন জোয়ার ফিরে পেলেও শুকনো মৌসুমে নব্যতা হারিয়ে যৌবন জোয়ার ভাটায় পরে যায়। এই নব্যতার সুযোগে বকশীগঞ্জের নদ-নদী গুলোতে অবাধে চলে বালু উত্তোলনের মহোৎসব । অপরদিকে ফসলি জমির টপ সয়েল মাটিও গিলে খাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটার মালিকরা । এভাবেই জলে ও স্থলে অবৈধ ড্রেজার,আর ভেকু মেশিনে দিনরাত বালু উত্তোলন ও বিক্রির হিড়িক পড়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদ-নদী গুলোতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে বালু উত্তোলনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমি থেকেও ভেকু মেশিন ও মাহিন্দ্র গাড়িতে করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট ভাটা গুলোতে। বালুবাহী মাহিন্দ্র গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে গ্রামীণ রাস্তা গুলোও ধ্বংসের মুখে।
প্রভাবশালী ওই সব বালু খেঁকো মহল নিজেদের ইচ্ছামত বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে আসছে।
এছাড়াও ফসলি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নেওয়া হয় ইটভাটা গুলোতে। বিশেষ করে ফসলি জমির টপ সয়েল মাটি বেশী দামে ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। ফলে জমির ঊর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে এবং ফসলি জমির গুলোর শ্রেণিও পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ওই বালু সিন্ডিকেট চক্র। প্রশাসন কে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে ওই সব বালু ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে রাতের বেলায় বালু উত্তোলন করে থাকে। এছাড়াও ভেকু মালিকরা সারা রাত ফসলি জমিতে মাটি কেটে গাড়ীতে ভরে বিক্রি করছে।
সাধুরপাড়া, মেরুরচর, নিলাখিয়া, বগারচর ইউনিয়নে ঘুরে দেখা গেছে, বালু খেকোরা যেন নদী গুলোকে বালু উত্তোলনের আঁতুর ঘর বানিয়েছেন। বালু উত্তোলন কাজে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তি, বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।
সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বালুগ্রাম ব্রিজ এলাকা, মেরুরচর ইউনিয়নের কলকিহারা, মাদারেরচর ব্রিজের নিচে,এবং শেকেরচর এলাকায় এভাবেই অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।, অপরিকল্পিত ভাবে এভাবে ড্রেজার মেশিন বালু উত্তোলনের কারণে ভূমিধ্বস, নদী ভাঙন সহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য হুমকির ।
স্থানীয় জমির মালিক ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি মাসে বকশীগঞ্জ উপজেলায় ৩ কোটি টাকার বালু ও মাটি বিক্রি করা হয়। এই টাকা সম্পূর্ণ বালু খেকোদের পকেটে চলে যায়। সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
এলাকা বাসী জানায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যখন অভিযান পরিচালনা করা হয় তখনই শুধু ক্ষনিকের জন্য বালু উত্তোলন বন্ধ থাকে। প্রশাসন চলে গেলেই আবার শুরু হয় বালু উত্তোলন। তাই প্রশাসনের বাড়তি তদারকির পাশাপাশি বালু খেকোদের নামে নিয়মিত মামলা করার দাবি জানান।
এব্যাপারে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদ-নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের কারণে একাধিক বার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এই অভিযান এখনও অব্যাহত রয়েছে।