রাজশাহীর পবায় গভীর নলকূপ জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ১৯ মে, ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম
রাজশাহীর পবায় গভীর নলকূপ জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ
রাজশাহীর পবায় গভীর নলকূপ জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে। পবা বিএমডিএ কর্তৃক অপারেটর নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও গভীর নলকূপ চালাতে পারচ্ছেন না। ঘটনাটি ঘটেছে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বরইকুড়ি-২ গভীর নলকুপে। বাগসারা গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে সোহেল রানা জোর করে গভীর নলকূপের অবৈধভাবে অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। বিষয়টি যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়োগপ্রাপ্ত অপারেটর ভুক্তভোগি জুলেখা খাতুন বিউটি পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের পরে তিনি এখন পর্যন্ত অপারেটরের দায়িত্ব বুঝিয়ে পাননি। কিন্তু প্রতিনিয়ত অবৈধ অপারেটর সোহেল রানার প্রাণ নাশের হুমকিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নারী অপারেটর জুলেখা খাতুন বিউটিকে। বিষয়টি নিয়ে তিনি চরম আতঙ্কর মধ্যে রয়েছেন। এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাগসারা গ্রামে বরইকুড়ি-২ গভীর গভীর নলকুপটি বরইকুড়ি জেএল নং ৯৯, দাগ নং ২ স্থাপন (বসানো) করা হয়। গভীর নলকুপটি নিয়োগপ্রাপ্ত বৈধ ভুক্তভোগি জুলেখা খাতুন বিউটির নামীয় জমিতে অবস্থিত। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ভুক্তভোগি জুলেখা খাতুন বিউটির মা অপারেটরের দায়িত্ব পালন করে। ২০০৪ সাল হতে ভুক্তভোগি জুলেখা খাতুন বিউটি নিষ্ঠার সাথে অপারেটরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর পুনরায় নবায়ন করা হয়। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী কর্তৃপক্ষ তাকে অপারেটর হিসেবে নিয়োগপত্রও দেন। কিন্তু সোহেল রানা জোর করে গভীর নলকূপের ঘরে প্রথমে তালা দেন। এরপর থেকে সোহেল রানা জোর করে অবৈধ অপাটরের দায়িত্ব নিয়ে গভীর নলকূপটি পরিচালনা করছেন। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, জুলেখা খাতুন বিউটি অপারেটরের দায়িত্ব নিয়ে সঠিক পরিচালনা করে আসছিলেন। জুলেখা খাতুন বিউটির জমিতে গভীর নলকূপটি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সোহেল রানার ওই গভীর নলকূপের আওতায় কোন জমি নেই। কিভাবে অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তা বুঝতে পারাচ্ছি না। বরইকুড়ি-২ গভীর নলকুপের অধিনে সর্বোচ্চ জমি চাষ করেন কৃষক মো: ফজর আলী। তিনি বলেন, এই গভীর নলকুপের অধীনে প্রায় দুইশত বিঘা জমি রয়েছে। আগে গভীর নলকুপের অপারেটর ছিল ওয়াহাব আলীর স্ত্রী অর্থাৎ জুলেখার মা। তিনি প্রায় ২৫-৩০ বছর যাবত গভীর নলকুপ অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তারপর অপারেটর হিসেবে নিযোগ পান জুলেখা খাতুন বিউটি। কিন্তু তাকে দায়িত্ব না দিয়ে গভীর নলকূপের অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন সোহেল রানা। বিষয়টি মিমাংসা করা জরুরি। অবৈধ অপারেটর সোহেল রানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে তিনজন পরীক্ষা দিয়েছিলাম। নিয়োগ পেয়েছেন জুলেখা খাতুন বিউটি। কেন আপনি গভীর নলকূপটি পরিচালনা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় বিএনপির ও জামায়াতে নেতাকর্মীদের সহযোগিতার আমি দায়িত্ব পালন করছি। এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা ও নওহাটা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দীন মোল্লা বলেন, ওই গভীর নলকূপে আমার জমি আছে। আমি একজন কৃষক। ১৭ বছর থেকে ডিপটির অপারেটর অনেক অনিয়ম করেছে। এসব অনিয়মের জন্য বিএমডিএ বরাবরে অনেক আবেদন করা হয়েছে। নিজেও গিয়ে মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে-অপারেটর পরিবর্তন করতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আগের প্রশ্নবিদ্ধ ব্যক্তিকেই অপারেটর নিয়োগ দিয়েছে। গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে যাকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে, তার বাবা ওহাব আলী আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয়কর্মী। তাই স্থানীয় কৃষকরা সোহেল রানাকে অপারেটর করে গভীর নলকূপটি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। জামায়াত নেতা মশিউর রহমান বলেন, গভীর নলকূপের সাথে আমার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এলাকার কৃষক যাকে চাইবে সেই অপারেটরের দায়িত্ব পাবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। নিয়োগপ্রাপ্ত ডিপ অপারেটর জুলেখা খাতুন বিউটির পক্ষে তার স্বামী শাহিন বলেন, ১৯৯৪ সালে গভীর নলকূপটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিক থেকে আমার শ্বাশুড়ি এই ডিপের অপারেটর ছিলেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোন কৃষক আমার শ্বাশুড়ি ও স্ত্রীর কোন অভিযোগ করেননি। গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন করে ইস্যু তৈরী করে মিথ্যা কথা বলছেন তারা। তাছাড়া কর্তৃপক্ষ সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করেই তো আমার স্ত্রীকে অপারেটরের দায়িত্ব দিয়েছেন। বর্তামানে জামায়াতে যুব বিভাগের কর্মী সোহেল রানা জোর করে গভীর নলকূপটি দখল নিয়ে অবৈধভাবে অপারেটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছি না। পবা উপজেলা বিএমডিএ সহকারী প্রকৌশলী মো: জামিনুর রহমান বলেন, বরইকুড়ি-২ ডিপ অপারেটর হিসেবে জুলেখা খাতুন বিউটি এক বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। কিন্তু দায়িত্ব পালন করছেন সোহেল রানা নামে একজন। বিষয়টি নিয়ে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে। আশা করছি বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে