কর্তৃপক্ষের সাথে আতাঁত

পীরগঞ্জে অর্ধ শতাধিক ভাটার বৈধতা নেই, নেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি

এফএনএস (মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান; পীরগঞ্জ, রংপুর) : | প্রকাশ: ১৯ মে, ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম
পীরগঞ্জে অর্ধ শতাধিক ভাটার বৈধতা নেই, নেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের অবৈধভাবে গড়ে ওঠা অর্ধ শতাধিক ইটভাটার মধ্যে মাত্র  টিতে অভিযান পরিচালনা করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। রংপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও ২ টিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। মোট ৭ টি ইটভাটায় আংশিক ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের নামে। ভেঙ্গে দেয়ার পরদিন থেকেই মেরামত করে ভাটাগুলো চালু করা হয়। অভিযোগ রয়েছে,বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো ছাড়াও অন্যান্য অনুষ্ঠানে দফায় দফায় ইটভাটা মালিকদের কাছে মোটা অংকের চাদা নেয়া হয়। যে কারনে উপজেলা প্রশাসন ভাটা মালিকেদের এক প্রকার কাছে জিম্মি। খবরের কাগজে লেখা লেখির কারনে শুধুমাত্র আই ওয়াস করার জন্য লোক দেখানো এই অভিযান! গোটা উপজেলায় ৫৫ টি ইটভাটা মালিক দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এসব ভাটামালিকের কারো কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমতিও। সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বিগত ২০১৮ সালে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে গড়ে ওঠা ৩২টি ভাটার মধ্যে এনামুল হক, রেজানুর শামীম ও আহসান হাবীবসহ ৩জনের পরিবেশের ছাড়পত্র ছিল। এরপর ২০১৯ সাল থেকে নতুন করে গড়ে উঠাসহ ৫৫ ভাটার কাউকে পরবর্তী বছরের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দেয়নি। তবে ভাটা মালিকরা প্রতিবছর পরিবেশ অধিদপ্তরে নির্ধারিত নবায়ন ফি জমা দিয়ে অনুমতিপত্র ছাড়াই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কেউ কেউ হাইকোর্টে রীট আবেদন করে ভাটা চালাচ্ছেন। উপজেলায় এ বছরও ২২টি ভাটা হাইকোর্টে রীট মুলে ব্যবসা পরিচালনা করছে। ২০১৩ সালে উচ্চ আদালত স্থায়ী চিমনী ভাটা বন্ধ করে দিলেও আদালতের রায় উপেক্ষা করে স্থায়ী চিমনীতে ১৬টি ভাটা চলছে পীরগঞ্জ উপজেলায়। খোদ উপজেলা সদরের এক কিলোমিটার দুরে মহাসড়ক সংলগ্ন মকিমপুর গ্রামে স্থায়ী চিমনীতে আগুন জ্বলে বছরের পর বছর। উপজেলা পরিষদ ভবন থেকে খালি চোখেই তা দেখা যায়। অধিকাংশ ইটভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। ভাটায় কিছু কয়লা রেখে জ্বালানি কাজে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বনের কাঠ। জ্বালানি কাজে কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও কোন তোয়াক্কা  করছে না ইটভাটার মালিকেরা। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়েই অবাধে পোড়ানো হচ্ছে ইট। ভাটার ধোঁয়া পরিবেশ নষ্ট করছে এবং ভাটার কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচলে ধুলাবালির কারনে এলাকার কোমলমতি স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েসহ পথচারীদের শ্বাসকষ্ট জর্নিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। এছাড়াও প্রতিদিন হাজারো মাহিন্দ্র দিয়ে কৃষি জমির মাটি ভাটায় বহন করা হচ্ছে, ইটভাটাগুলো নির্বিচারে মাটি গিলে, পোড়া ইট বের করা হচ্ছে। ইটভাটার গাড়ি স্কুল কলেজ,হাটবাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে এবং রাস্তাঘাটের বাকল বা ছাল তুলছে। এদের কারনে এলাকায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, ২০১৯ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুরত্বের কারনে পরিবেশ অধিদপ্তর কাউকে অনুমতি পত্র দিচ্ছে না। ২০২৪ সালে বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২৮টি ভাটা বন্ধে নোটিশ জারি করেই দায়িত্ব সেরেছেন। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার খাদিজা বেগম কুমেদপুর ইউনিয়নে ৩ টি এবং পরবর্তীতে মদনখালী ইউনিয়নে ২ টি ভাটায় অভিযান চালিয়েই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের ইতি টেনেছেন। যা রীতিমতো রহস্যজনক। এ নিয়ে নানা গুঞ্জনেরও সৃষ্টি হয়েছে! মুলত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একসাথে ৪ টি দপ্তর চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছেন। কোন দপ্তরেই ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না। সবগুলোতেই একটা হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে। সঙ্গত কারনেই অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানও এ কারনে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে