প্রাথমিক শিক্ষা একটি জাতির ভিত্তি। অথচ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র দেখে মনে হয়, সেই ভিত্তি আজ নড়বড়ে। ভাঙাচোরা ভবন, ছাদে ফাটল, কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ছে, কোথাও রড বেরিয়ে পড়েছে-এমন চরম ঝুঁকির মধ্যেই সেখানে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে বসে যেন অনিবার্য দুর্ঘটনার অপেক্ষায় থাকে। প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। কিন্তু কৌগাঁও পাঠানপাড়া, বেলপুকুর, আঙ্গারপাড়া ও পূর্ব নলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা দেখে মনে হয়, সেই দায়িত্ব শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ। বেলপুকুর বিদ্যালয় ভবন তো ২০১৯ সালেই উপজেলা প্রকৌশলী ‘পরিত্যক্ত’ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এখনও সেখানে ক্লাস চলছে। এটি শুধু প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার নিদর্শন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের জীবনের সঙ্গে সরাসরি ঝুঁকি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার নামান্তর। শিক্ষকদের পক্ষে কোনো বিকল্প না থাকা সত্ত্বেও তারা নিরুপায়ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিচ্ছেন, এটি তাদের পেশাগত দায়বদ্ধতা ও মানবিক চেতনার পরিচায়ক। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এতদিনেও কেন এই সংকটে পৌঁছেনি? বছরের পর বছর অভিযোগ গিয়েছে, ভবন পরিত্যক্ত হয়েছে, তবু কোনো বাস্তব অগ্রগতি নেই-এটি অবহেলা নাকি অযোগ্যতা? উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি, প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে। কিন্তু বিষয়টি এখন আর শুধু বরাদ্দের অপেক্ষার নয়। এটি এক ধরনের জরুরি অবস্থা। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এবং সেটি হলে দায় কার? এমন অব্যবস্থাপনা প্রাথমিক শিক্ষাকে শুধু ব্যাহতই করছে না, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ক্লাসে বসে পলেস্তারা খসে পড়ার ভয় বা বৃষ্টির সময় শ্রবণ-দূরত্বে শিক্ষাদান-এসব কোনোভাবেই মানসম্পন্ন শিক্ষা নয়। সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করে বিকল্প শ্রেণিকক্ষ, টিনশেড বা ভ্রাম্যমাণ শ্রেণির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। একই সঙ্গে দ্রুত প্রকল্প হাতে নিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করতে হবে। শিশুদের জীবনের মূল্য কোনো হিসাব-নিকাশের অপেক্ষা করতে পারে না। প্রাথমিক শিক্ষা হলো জাতি গঠনের বীজ রোপণের সময়। সেই বীজ যদি ঝুঁকির ছাদের নিচে পচে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ ফলন কেবল হতাশাই বয়ে আনবে।