ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বৈধ মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান ও শপথ গ্রহণের দাবি জানিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন তার সমর্থকরা। নগর ভবনের সামনে হাজারো নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে মঙ্গলবার (২০ মে) কর্মসূচির সপ্তম দিন পালন করছে।
সকাল ৯টা থেকে ‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, মহিলা দল, শ্রমিক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলররাও এতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। সকাল ১০টার আগেই প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে নিয়ে নগর ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভকারীরা ‘ইশরাককে মেয়র করো’, ‘ইশরাক তোমার ভয় নাই, নগরবাসী তোমার সাথে’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা চলবে না’, ‘ঢাকাবাসীর অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ ইত্যাদি স্লোগানে রাজপথ মুখর করে তোলেন। পাশাপাশি, তারা ডিএসসিসির উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগেরও দাবি জানান।
নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই। বন্ধ রয়েছে প্রতিটি অফিস কক্ষ, লিফট এবং জনসেবামূলক কার্যক্রম। ফলে দূরদূরান্ত থেকে আসা সেবাপ্রত্যাশীরা ফিরে যাচ্ছেন। গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজার এলাকার সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হওয়ায় পথচারী ও অফিসগামী মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস বিপুল ভোটে জয়ী হন। পরাজিত বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন ওই ফলাফলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করলে চলতি বছরের ১৩ চৈত্র (২৭ মার্চ) আদালত তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন। পরে, ১৪ বৈশাখ (২৭ এপ্রিল) নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে।
তবে দীর্ঘ এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তার শপথ গ্রহণ বা দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। আন্দোলনকারীদের দাবি, আদালতের রায় ও গেজেট অনুসরণ করে অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।
রাজধানীর ৫২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম আনিস বলেন, “ইশরাক ভাই হলো জনতার মেয়র। তাকে দায়িত্ব না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। শুরুর দিন থেকেই আমরা মাঠে আছি এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে প্রস্তুত।”
আন্দোলনে অংশ নেওয়া করিম হোসেন বলেন, “এটি শুধু একটি দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রশ্ন নয়, বরং এখন এটি একটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকটে রূপ নিচ্ছে।”
‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারের মুখপাত্র মশিউর রহমান বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু সরকার যদি আজকের মধ্যে কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে এর জন্য তারা দায়ী থাকবে।”
নগর ভবনের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে সরকার বা ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।