কোরবানির ঈদকে ঘিরে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত চাঁদপুরের খামারিরা

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) : | প্রকাশ: ২০ মে, ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
কোরবানির ঈদকে ঘিরে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত চাঁদপুরের খামারিরা

আসন্ন কোরবানির ঈদকে ঘিরে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত চাঁদপুরের খামারিরা। এবার ৭৬ হাজার পশুর চাহিদা থাকলেও কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৬২ হাজার ৯৮ পশু। এতে দাপ্তরিক হিসেবে পশুর সংকট থাকবে ১৪ হাজার। তবে আশপাশের জেলার পশু হাটে উঠলে এই সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। জেলা প্রশাসকের উন্নয়ন সমন্বয় মাসিক সভায় চাঁদপুরে যাতে কুরবানী পশুর সংকট না হয়, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়ার জন্য  বলেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন। প্রতিটি পশুর হাটে প্রাণী সম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিম রাখা ও জাল টাকা সনাক্তকরণে মেশিন ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

দাম ভালো পেলে লোকসান কাটাতে পারবে বলে মনে করেন খামারিরা।

সম্প্রতি সময়ে সদর ও আশপাশের উপজেলায় খামারি এবং প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানাগেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য মোতাবেক,  জেলায় তালিকাভুক্ত খামারি রয়েছে ৩ হাজার ৭৭০ জন। খামারগুলোতে গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪ শত ৯৭টি। ছাগল ভেড়া ও অন্যান্য পশু উৎপাদন হয়েছে ১৯ হাজার ৬০১টি। সব মিলিয়ে মোট উৎপাদন হয়েছে ৬২ হাজার ৯৮টি।

কোরবানির জন্য গবাদি পশু প্রয়োজন ৭৬ হাজার ৩৫৪টি। হিসেব মতে গবাদি পশু সংকট রয়েছে ১৪ হাজার ২৫৬টি। চলতি বছর জেলায় ষাঁড় গরু উৎপাদন হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭, বলদ ৭ হাজার ৭৮১, গাভী ১০ হাজার ৪৬৯ টি। সর্বমোট গরু উৎপাদন হয়েছে ৪২ হাজার ৪৯৭টি। মহিষ ২১৭, ছাগল ১৮ হাজার ৪৫৮, ভেড়া ৮৩০ ও অন্যান্য পশু ৯৬টি।

চাঁদপুর শহরের ওয়াপদা গেইট এলাকার স্যাটকো সিনজি ফিলিং স্টেশনের মালিকানাধীন স্যাটকো ফার্মের মালিক ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আহমদ পাটোয়ারী

তার খামারে উন্নত মানের গরু ছাগল দেশীয় প্রযুক্তিতে লালন পালন করা হয়।   তাঁর এই খামারে দুগ্ধ উৎপাদনের পাশাপাশি কোরবানির জন্য পশু পালন করা হয়। এ বছর ২০- থেকে ২৫টি ষাঁড় গরু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রেখেছেন । আশাকরি দাম ভালো পেলে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন। কারণ পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে।

কল্যাণপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন গাজী বলেন, এলাকায় একাধিক খামারি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাবারে এস ষাঁড় প্রস্তুত করেছে। তারা যদি ষাঁড়গুলোর দাম ভালো পায় তাহলে টিকে থাকতে পারবে। লোকসানে পড়লে খামারি সংখ্যা কমে যাবে এবং বিনিয়োগে আগ্রহ হারাবে।

ওই এলাকার ফারিজ এগ্রো ফার্মে শহর থেকে কোরবানির জন্য ষাঁড় দেখতে এসেছেন ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন মিলন। তিনি বলেন, এই খামারের ষাঁড়গুলো দেখে পছন্দ হয়েছে। তবে দরদামে ঠিক থাকলে কেনা যাবে।

সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের খামারি মান্নান বলেন, খামারে এখন গরুর সংখ্যা কম। কারণ বিক্রিতে খরচ উঠে আসে না। এতে অনেকে আগ্রহ হারিয়েছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার খামারি জসিম উদ্দীন মিন্টু বলেন, গবাদি পশুর খাদ্যের দাম বৃদ্ধি, খড়ের অপর্যাপ্ততা এবং শ্রমিক সংকটের কারণে অনেকের ইচ্ছে থাকলেও গবাদিপশু পালনে আগ্রহ হারাচ্ছে। খামারি তৈরি করার জন্য সরকারি প্রণোদনা প্রয়োজন।

একই উপজেলার সকদীরামপুর গ্রামের শাহাবুদ্দিন, ছামাদ মিজি, আক্তার হোসেন পাশাপাশি বাসিন্দা। তারা পারিবারিকভাবে ৫ থেকে ৭টি করে কোরবানির ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। এদের মধ্যে শাহাবুদ্দিন বলেন, তারা নিজেদের পরিশ্রমে এসব পশু লালন পালন করেন। আশা করছেন তাদের ষাঁড় বিক্রিতে লাভবান হবেন।

চাঁদপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, এ বছর আমরা কোরবানি প্রস্তুত করার জন্য সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছি। যথাসাধ্য চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। আর পশুগুলো প্রাকৃতিক খাবারে বেড়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, জেলায় দুই শতাধিক কোরবানির পশুর হাট বসবে। চাহিদার আলোকে কোন ধরণের পশুই সংকট হবে না। কারণ কোরবানির হাটে অন্য জেলার পশু আসলে চাহিদা মিটে যায়। সংকট অবশ্য কাগজে কলমে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে আর্থিক লেনদেন ও ক্রেতার নিরাপত্তায় পুলিশবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও পুলিশের টহল সদস্যরাও কাজ করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে