বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও অন্যান্য পাওনার দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থান নিয়েছেন তৈরি পোশাক কারখানার শত শত শ্রমিক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ‘যমুনা’র দিকে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও, পুলিশি বাধার মুখে পড়ে কাকরাইল মসজিদের মোড়েই অবস্থান নিয়েছেন তারা।
বিক্ষোভরত শ্রমিকরা মূলত গাজীপুরে অবস্থিত টিএনজেড গ্রুপের আটটি, আশুলিয়ার চেইন অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং ডার্ড গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে থেকে যাত্রা শুরু করেন বিক্ষোভরত শ্রমিকরা। তাদের গন্তব্য ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাকরাইলের বাসভবন। কিন্তু বিকেল ৩টার দিকে মিছিলটি কাকরাইল মসজিদের মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথ রোধ করে। বাধার মুখে শ্রমিকরা সেখানেই রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন।
পুলিশের বাধার পরও শ্রমিকদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। বরং বিকেল সোয়া ৩টায় বৃষ্টি শুরু হলেও বিক্ষোভরত শ্রমিকদের অনেকে বৃষ্টিতে ভিজেই অবস্থান চালিয়ে যান। এ অবস্থানে কাকরাইল মসজিদ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত রাস্তা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। মৎস্যভবন থেকে কাকরাইলগামী সড়কেও আংশিক যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, টিএনজেড গ্রুপের কাছে তাদের প্রায় ৫৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ঈদুল ফিতরের আগে প্রতিষ্ঠানটি মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে, যেখানে পূর্ব প্রতিশ্রুতি ছিল ৩ কোটি টাকার। সেই টাকায় প্রতিজন শ্রমিক মাত্র ৯ হাজার ১০০ টাকা পেয়েছেন, যা তাদের প্রাপ্যের একাংশ মাত্র।
গত ১১ মে থেকে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন এসব পোশাকশ্রমিক। শ্রমিকদের একজন, নাছিমা আক্তার জানান, “তিন মাস ধরে বেতন পাই না। ৯ দিন ধরে এখানে বসে ছিলাম, কেউ দেখেনি। বাধ্য হয়েই যমুনার দিকে রওনা দিয়েছি।” একইভাবে শাহ পরান নামের আরেক শ্রমিক বলেন, “৭ মে’র মধ্যে বেতন দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা এখনো পাইনি। তাই আমরা আজ রাস্তায়।”
টিএনজেড শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, “নানা দপ্তরে গিয়েছি, আশ্বাস পেয়েছি, কিন্তু বেতন পাইনি। তাই আজ বাধ্য হয়েই যমুনার দিকে রওনা দিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই থাকব।”
বিক্ষোভকারীরা ‘যাব না রে, যাব না, বেতন ছাড়া যাব না’, ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও, নইলে গদি ছাইড়া দাও’—এই ধরনের স্লোগানে কাকরাইল এলাকায় মুখরিত করে তোলেন।
ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রমনা থানার ওসি গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।