ঐতিহাসিক 'মুল্লুক চলো' আন্দোলনের ১০৪তম বার্ষিকী পালন

চা শ্রমিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে দেশব্যাপী ঐতিহাসিক 'মুল্লুক চলো' আন্দোলনের ১০৪তম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে। মালনীছড়া, হিলুয়াছড়া, লাক্কাতুরা, দলদলি, কালাগুল, বুরজান, লালাখাল, শ্রীবাড়ি ও বটতলাসহ বিভিন্ন চা-বাগানে আলোচনা সভা, মিছিল এবং শহীদ স্মরণে অস্থায়ী শহীদ বেদী নির্মাণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে মালনীছড়া চা বাগানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও মিছিলে সভাপতিত্ব করেন চা শ্রমিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অজিত রায় এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক বচন কালোয়ার।

প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্ধারিত কর্মসূচি সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা ও বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সাংগঠনিক কমিটির সমন্বয়ক সঞ্জয় কান্ত দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক অধীর বাউরী, সহ-সাধারণ সম্পাদক রবি মাল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক চঞ্চল বাক্তি, দপ্তর সম্পাদক চম্পক বাউরী এবং সদস্য লিপি গঞ্জু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ঐতিহাসিক মুল্লুক চলো আন্দোলন শুধু চা শ্রমিকদের নয়, এটি এই অঞ্চলের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেরও এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯২১ সালের ২০ মে চাঁদপুরের স্টিমারঘাটে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডকে তৎকালীন পত্রিকাগুলো জালিওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছিল। অথচ ১০৪ বছর পেরিয়ে গেলেও এই দিবসটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি।

বক্তারা অবিলম্বে ২০ মে-কে 'চা শ্রমিক দিবস' হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সবেতন ছুটি এবং এ ইতিহাসকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

তারা বলেন, বর্তমানে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮.৫ টাকা, যা দিয়ে কোনওভাবেই ন্যূনতম জীবনধারণ সম্ভব নয়। বর্তমান বাজারমূল্যের প্রেক্ষাপটে দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা করা উচিত।

সম্প্রতি শ্রম উপদেষ্টা চা শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছেন, চা পাতার দাম বাড়লে শ্রমিকদের মজুরি বাড়বে। বক্তারা এ মন্তব্যকে শ্রমিকদের সঙ্গে প্রহসন আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান। তারা বলেন, মজুরি চা পাতার দামের সাথে নির্ভরশীল হতে পারে না।

বক্তারা রুগ্ন ও বন্ধ চা বাগানগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা, প্রতিটি বাগানে একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, এমবিবিএস ডাক্তার ও মিডওয়াইফ নিয়োগ এবং চা বাগান এলাকার ভূমিতে চা শ্রমিকদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

তারা আরও বলেন, মুল্লুক চলো আন্দোলন চা শ্রমিকদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জীবন উৎসর্গের প্রেরণা দেয়। এই দিবসটি চা শ্রমিকদের চেতনার বাতিঘর হিসেবে আপোষহীন লড়াইয়ের পথ দেখাবে।