বহুল আলোচিত ৪৩তম বিসিএসের দীর্ঘমেয়াদি নিয়োগপ্রক্রিয়ায় বাদ পড়া বহু প্রার্থীর অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। নতুন করে প্রকাশিত গেজেটে ১৬২ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতা ও যাচাই-বাছাই সংক্রান্ত কারণে এদের নাম আগের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা নিয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছিল।
মঙ্গলবার (২০ মে) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এই নতুন গেজেট জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তারা আগামী ১ জুন থেকে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ে যোগ দেবেন। তাঁদের জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ২২,০০০–৫৩,০৬০ টাকা বেতনক্রমে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ বিভিন্ন ধাপ শেষে ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) মোট ২ হাজার ১৬৩ জন প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অনেক প্রার্থীকে বাদ দেওয়া হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম গেজেটে ২ হাজার ৬৪ জন প্রার্থীর নিয়োগ চূড়ান্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে সুপারিশপ্রাপ্ত ৯৯ জন বাদ পড়েন। পরবর্তীতে ৩০ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় গেজেট জারি করে ২৬৭ জনকে বাদ দিয়ে ১ হাজার ৮৯৬ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাদ পড়াদের মধ্যে ছিলেন স্বাস্থ্য পরীক্ষায় অনুপস্থিত ৪০ জন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে সাময়িকভাবে অনুপযুক্ত বিবেচিত ২২৭ জন।
এতসব বাদ-জোড়ের পর আজকের গেজেটে সেই ২২৭ জনের মধ্য থেকে ১৬২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বাকিদের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি।
গেজেট থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে গেজেটভুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। জানুয়ারি মাস থেকেই তাঁরা সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও গণঅনশন করেন। সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল থেকে কয়েকজন প্রার্থী গেজেটভুক্তি ও যাচাই-বাছাই নীতিমালা প্রণয়নের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। সেই চাপের মুখেই শেষ পর্যন্ত এই গেজেট প্রকাশ হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এক ভুক্তভোগী প্রার্থী বলেন, "আমরা এক প্রকার লড়াই করেই এই গেজেট আদায় করেছি। এখন অন্তত নিঃশ্বাস নিতে পারছি।"
১৬২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হলেও ২২৭ জনের মধ্যে এখনও শতাধিক প্রার্থী গেজেটের বাইরে রয়ে গেছেন। তাঁদের ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আবার আন্দোলনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বাকি প্রার্থীদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই এখনো চলমান এবং ভবিষ্যতে তাঁদের নিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আলাদাভাবে নেওয়া হবে।