গ্রীষ্মকাল মানেই বাংলার পৃথিবীতে রঙের বিস্ফোরণ। সেই রঙিন উৎসবের প্রাণ ভোমরা যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল।আর এই কৃষ্ণচূড়া জাদুতে মোড়ানো সাতক্ষীরা তালা উপজেলা পাটকেলঘাটার ইকো পার্ক ।
সবুজ গাছগাছালির মধ্যে আগুন রাঙা কৃষ্ণচূড়া প্রকৃতিতে এনেছে ভিন্ন আমেজ।গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে বৈশাখের আকাশে কৃষ্ণচূড়া তার রূপ মিলে ধরেছে। নিসর্গ প্রেমীরা এই ফুলের মুখ দেখে মুগ্ধ। মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেষে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে পাটকেলঘাটা ইকোপার্ক। এই পার্কের নদের ধার দিয়ে নতুন রুপে সেজেছে কৃষ্ণচূড়ার রঙিন ফুল।যাহা নদের পানির ঢেউয়ের সাথে তাল মেলিয়ে হেলিয়া দুলিয়া পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে। আর এই কৃষ্ণচূড়া রঙিন ফুল ও নদের পানির ঢেউ এর তাল ও সুন্দর্য উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছে। বিকাল হলেই সাধারণ জনগণের সাথে সাথে প্রেমিক-প্রেমিকার জুটি এখানে হাজির হয়ে কৃষ্ণচূড়া লাল রঙিন টুকটুকে ফুলের সৌন্দর্য ও নদের ঢেউয়ের দৃশ্য দেখার সাথে সাথে তাদের দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে স্মার্ট ফোন ও ক্যামেরার মাধ্যমে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলে মনের ভাব প্রকাশ করছে ।
অপরদিকে প্রেমে ব্যর্থ হওয়া আবেগি মন নিয়ে অনেকে এখানে এসে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ্গিন টুক টুকে ফুলের দৃশ্য ও নদের পানির ঢেউয়ের সাথে সাথে ভারতীয় বাংলা কিশোর কুমারের সেই প্রিয় গান এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার তলে দাড়িযে চোখে চোখ হাতে হাত, কথা যেত হারিয়ে। আজ আশা নেই, ভালোবাসা নেই। তাদের নিজস্ব মোবাইলে এই গান শুনত শুনতে বিগত দিনের ফেলে আসা প্রেমিকের দেওয়া কথার কল্পনায় হারিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় তাদের মাথার উপরে বৈশাখের বিকালে পড়িত বেলায় এলোমেলো হাওয়ায় দুলছিল সেই কৃষ্ণ চুড়ার লাল টুকটুকে ফুলের কলি। তখন এলোমেলো মন টা উৎফুল্ল হয়ে মোবাইলে কিশোর কুমারের গানের সাথে সাথে ঠোঁট মিলিয়ে কৃষ্ণচূড়া গানের মাঝে হারিয়ে যেতে দেখা যায় তাদেরকে।
শুধু তাই নয় অনেক কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ বাজারের বিভিন্ন দোকানে দোকানে অর্ডার নেওয়ার পরে তাদের ক্লান্তি দূর করার জন্য এখানে কৃষ্ণচূড়ার গাছের নিচে বসে মনটা রিফ্রেশ করতে দেখা যায়।
কথা হয় আদিয়ান গ্রুপের সাতক্ষীরা সিনিয়র ম্যানেজার মাসুম এর সাথে তিনি বলেন আমরা সারাদিন পরিশ্রম করে এএলাকায় আসলেই এখানে এসে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে নদীর ঢেউ দেখতে দেখতে আমাদের শরীরের ক্লান্তি দূর করে নেই। এখানে আসলে কৃষ্ণচূড়ার ফুলের মাঝে আমরা অনেক সময় পিছনের ফেলে আসা দিন ভাবতে ভাবতে হারিয়ে যাই।
পথচারী মাহবুব জানান আসলে আমাদের এই সড়কের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কৃষ্ণ চুড়া গাছের ফুল এলোমেলো হাওয়ায় যখন দোলে তখন সেই দৃশ্য আমাদের ক্যামেরা বন্দি করে রচখতে খুব ভালো লাগে।
ভ্যান চালক কৃষ্ণ দাস জানান ভাই কৃষ্ণ চুড়া ফুল দেখলে এমনিতেই মন ভরে যায়। আসলে এই কৃষ্ণ চুড়া গাছ যে কোন সড়কের দুপাশে থাকলে তখন ঐ সড়কে যাতায়াত করতে ও মনটা ভরে যায়। এমনি করে তালার পাটকেলঘাটার কপোতাক্ষ ইকো পার্কের নদের ধারে কৃষ্ণ চুড়া ফুল এমনি করে আমাকে সহ সাধারণ পথচারীদের হাতছানি দিচ্ছে।
উপজেলার পাটকেলঘাটা বাজারে বাজার করতে আসো খাইরুল আলম বলেন আমি এখানে বাজার করতে আসলেই এই রোড দিয়ে প্রতিনিয়ত যাতায়াত করি এখানকার কৃষ্ণচূড়া গাছের রঙিন রক্তাক্ত লাল ফুল মনকে সবসময় উৎফুল্ল করে দেয়।
উপজেলার পাটকেলঘাটা কুমিরা মহিলা কলেজের প্রভাষক ইয়াসিন আলী লাকি বলেন কৃষ্ণচুড়া আদি নিবাস মাদাগাসকার দ্বীপে। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে এটি গুলমোহর নামে ও পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের সর্বত্র এই গাছ আছে। কৃষ্ণচুড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ফবষড়হরী ৎবমরধ । এটি সিভিসি গোত্রের উদ্ভিদ প্রজাতিভেদে ফুল ফোটে। এপ্রিল থেকে জুলাই মাস জুড়ে এই ফুল সভা বন্ধন করে।