সাটুরিয়ায় বিদ্যালয় স্থানান্তর দন্ধের অবসান, প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

এফএনএস (মোঃ মোতালেব হোসেন; সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ) : | প্রকাশ: ২১ মে, ২০২৫, ০৪:৪১ পিএম
সাটুরিয়ায় বিদ্যালয় স্থানান্তর দন্ধের অবসান, প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে স্থানান্তর করে পশ্চিম পাশে স্থানান্তর পত্রটি বাতিল করা হয়েছে। বিদ্যালয়টি নদীর পূর্ব পাড়ে অর্থাৎ বর্তমান স্থানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার চিঠি ইস্যু করে অনুরুধ করা হয়েছে। এর আগে ১৩ মে বিদ্যালয়টি সভাপতি পরিবর্তন করে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভিন আহমদকে নতুন সভাপতির চিঠি দেওয়া হয়। নতুন সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার ৬ দিনের মাথায় ১৯ মে সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালামকে পেশাগত অসদাচরণ, কর্তব্যে অব‌হেলাসহ নানা কার‌ণে সাময়িক ভা‌বে বহিষ্কার করা হ‌য়। 

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০১৫ সনে সর্বস্তরের চরাঞ্চলের জনসাধারণের কথা চিন্তা করে ছনকা গ্রামে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছালাম ও প্রতিষ্ঠাতা প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাজাহান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদেও ভূল ব্যাক্ষা দিয়ে বিদ্যালয়টি নদীপর পূর্ব পাড় থেকে পশ্চিম পাশে নেবার একটি চিঠি নিয়ে আসেন। পরে রাতের আধারে বিদ্যালয়ের নদীর র্প্বূ পাড়েরর দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী রেখে পশ্চিম পাশে নিয়ে যায়। এ নিয়ে আমাদের দুই পারের মধ্যে মানসিক যুদ্ধ লাগে। এ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রালায় আমাদের বর্তমান স্থানেই ক্লাস রাখার চিঠি দেয়।

খোজ নিয়ে যানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক- ১ শাখার উপ সচিব  সাঈয়েদ এ, জেড, মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত ২০-০৫-২৫ তরিখে চিঠির মাধ্যমে সাটুরিয়া উপজেলাধীন ১ নং বরাইদ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শিক্ষা বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তরের গত ১২-০২-২০২৫ পত্রটি বাতিল করা হল। সেই সাথে বিদ্যালয়টি নদীর পূর্বপাড়ে বর্তমান স্থানে রেখে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।

এর আগে ১৩ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর কাজী ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত ৩৯৬ স্বারক সম্বলিত এক চিঠির মাধ্যমে পূর্বের আহবায়ক কমিটির সভাপতি পরির্বতন করে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভিন আহমদকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার ১৯ মে নতুন সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার ৬ দিনের মাথায় সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ৪৮৫ নং স্বারকে মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালামকে সাময়িক ভা‌বে বরখাস্ত করেন।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষা বঞ্চিত মানুষের স্বার্থ রক্ষার্থে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালাম এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সরকার বিরোধীসহ শিক্ষা ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ড, অদক্ষতা, পেশাগত অসদারণ, কর্তব্যে অবহেলা,  উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উথাপিত হওয়া, দীর্ঘ দিন বিনা অনুমুতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকা এবং ফৌজদারী মামলা নং ০৪/২০২৫ চলমান থাকার কারনে প্রবিধমালা ২১৪ ধারা ৫৫-(১) আলোকে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুস ছালামকে সাময়িক ভা‌বে বরখাস্ত  করা হলো।

নদীর পূর্ব পাড়ের বিদ্যালয়টি থাকবে এমন চিঠি পাওয়ার পর আনন্দের বন্যা বইছে স্কুল পাড়ায়। 

বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফাহিমা আক্তার বলেন, নদীপর পূর্ব পারে স্কুল থাকার চিঠি আসছে। এতে আমারা খুব খুশী। এতদিন ক্লাস করতে পারি নি। এখন আমাদের ক্লাস নিয়মিত চাই। 

১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিম আক্তার বলেন, সামনে আমাদের পরীক্ষা ক্লাস না হওয়ার কারনে আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল। 

একই ক্লাসের আমিনুর রহমান বলেন, এমনিতেই এ বছর বই পড়ে পেয়েছি। আবার দুই পার নিয়ে ক্লাস অনিয়মিত ছিল। এখন আমরা বাকী সময় ক্লাস নিয়মিত পেতে চাই। 

সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব কিছু বিবেচনা করে বিদ্যালয়টি নদীর পূর্ব পাশে রাখার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। উপজেলা প্রশাসনের সঠিক সিদ্ধান্তের কারনেই চরবাসী শিক্ষা সুবিধা পাবে।  

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তের স্বিদ্ধান্ত বাতিলের চিঠি পেয়েছি। দ্রুত তা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ নিব।

সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি তানভিন আহমদ বলেন, গত ২০ মে চিঠি পেয়েছি বিদ্যালয় আগের স্থানে ক্লাস হবে। এর আগে ১৯ মে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। বুধবার বাকী শিক্ষকদের আমি ঢেকে এনেছিলাম। তারা অঙ্গীকার করেছে বৃহস্পতিবার থেকে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়েই নিয়মিত ক্লাস করবে। এর ব্যতিক্রম হলে প্রধান শিক্ষকের মত তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে সকল শিক্ষক নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এ নিয়ে নদীর দুই পাড়ের সাথে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। আমি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সকল পদক্ষেপ নিয়েছি। যার ফলে কোন রকম ঝামেলা ছাড়া ক্লাস নদীর পূর্বপাড়ে নেবার চিঠি এসেছে মন্ত্রণালয় থেকে। 

উল্লেখ্য উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নটি ধলেশ্বরী নদী দ্বারা শাষিত। এখানকার বেশীর এলাকা চরাঞ্চল। বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা গ্রামে আশে পাশে কোন বিদ্যালয় নেই। সেই আলোকে ২০১৫ সনে সর্বস্তরের জনসাধারণের কথা চিন্তা করে ছনকা গ্রামে ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে চরাঞ্চলের শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থীরা সুবিদা পেতে শুরু  করে।  পরবর্তীতে বিদ্যলয়টি ২০২২ এমপিওভুক্ত হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শাজাহান এবং প্রধান শিক্ষক  আব্দুল সালাম মিলে বিদ্যালয়টি ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে নেবার সিদ্ধান্ত নেন। পরে ২০ মে বিদ্যালয়ের বর্তমান স্থানে ক্লাসের জন্য চিঠি দেওয়া হয়।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে