শিক্ষক- ছাত্রী কাণ্ডে অভিযুক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেদায়েত উল্লাহ (পাপুল) ও ছাত্রীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে একই বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী। এর আগে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও বিভাগের সভাপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
বুধবার (২১ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট চত্বরে এই সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা।
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সাবেক সমন্বয়ক ও দুই সাংবাদিকসহ চার শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেছেন ওই শিক্ষক। মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে নগরের মতিহার থানায় এ মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক।
মামলায় অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থী হলেন, আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম সুমন, আইবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আতাউল্ল্যাহ এবং ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন সজীব।
দুই সাংবাদিকের একজন কালবেলা এবং অন্যজন খবরের কাগজে কর্মরত ছিলেন। অভিযোগ ওঠার পর প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের অব্যাহতি দিয়েছে। দুজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সদস্য ছিলেন। সংগঠন থেকেও তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, গত ১১ মে বিকাল ৫টার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের এমবিএ এর ছাত্রী মারিয়া খাতুন পড়াশোনার বিষয়ে দেখা করতে ওই শিক্ষকের চেম্বারে যান। এক পর্যায়ে অভিযুক্তরা কক্ষে ঢুকে গালিগালাজ ও ওই ছাত্রীকে শারীরিক হেনস্তা করে। এক পর্যায়ে তাঁরা ভিডিও করতে থাকে ও ওই ছাত্রীকে মারতে আসে এবং তাকে ধর্ষণের হুমকি দেয়। পরবর্রতীতে ঘটনাস্থলে শিক্ষকের কাছ থেকে পাচঁ লাখ টাকা চাদাঁ দাবি করে। সেই সাথে চাদাঁ না দিলে ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের এটিএম বুথ থেকে ১ লাখ টাকা তুলে সিরাজুল ইসলাম সুমনের হাতে দেই এবং নাজমুস সাকিব আরও চার লাখ টাকা পেলে ভিডিও ডিলিট করার কথা বলে।
এছাড়া আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১২ মে সকালে সুমন হোয়াটসঅ্যাপে বাকী চার লাখ টাকা দেওয়ার জন্য বলে। একই দিন দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনের ৩য় তলায় আমাকে পশ্চিম পাশে ডেকে নিয়ে যেয়ে টাকা প্রদানের কথা বলে। উল্লেখ্য যে, আতাউল্ল্যাহ এবং সাজ্জাদ সে সময় আইনে বিভাগের গেটে অবস্থান করে আমাকে সাকিব ও সুমনের কাছে ইশারায় টাকা দিতে বলে। আমি আমার ৩০৭ নং কক্ষ থেকে সাকিব ও সুমনের কাছে দুই লাখ টাকা দিই। এই সম্পর্কিত কল রেকর্ড আমার কাছে আছে। সুমন আমাকে জানায় যে, ১৮ মে বাকী দুই লাখ টাকা দিতে হবে এবং তাদের ইন্ধনদাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকালটির একজন শিক্ষক এই ঘটনার ও আর্থিক লেনদেনের সাথে জড়িত। বাকী লাখ টাকা দিলে ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ করবে বলে জানায়। পরবর্তীতে ১৪ মে রাতে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বিকৃতভাবে প্রকাশ করে আমাকে এবং আমার ছাত্রীকে সামাজিকভাবে হেনস্তা করে।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, মঙ্গলবার দুপুরের পর মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। এখন তদন্তাধীন রয়েছে।
এদিকে শিক্ষক ও ছাত্রীর শাস্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাদের দুজনের বহিষ্কার; ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চাঁদা গ্রহনকারী চার শিক্ষার্থীর স্থায়ী বহিষ্কার; হেদায়েত উল্লাহর ফলাফল জালিয়াতির সুষ্ঠ তদন্ত এবং যথাযথ বিচার; হেদায়েত উল্লাহ পাশের বিনিময়ে শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষককে হত্যার প্ররোচনা প্রদানের সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার এবং হেদায়েত উল্লাহর পর্দা করা ছাত্রীদের উপর একাডেমিক ও মানসিক নির্যাতনের সুষ্ঠ তদন্ত এবং বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সহযোগী অধ্যাপক হেদায়েত উল্লাহ পাপুলের বিরুদ্ধে পূর্বেই ছাত্রীদের রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে মানসিক হয়রানি, ইচ্ছাকৃত ফেল করিয়ে ছাত্রীদের চেম্বারে ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং পর্দাশীল ছাত্রীদের বিভিন্ন রকমের মানসিক হেনস্তার অভিযোগ ও রয়েছে। যার মধ্যে কয়েকটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বিভাগে অভিযোগ জানানোর পরও আমরা আশানুরুপ কোনো ফলাফল পাইনি। যার ফলস্বরুপ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের মানসিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে।
এতো অপরাধের পরও কোনো প্রকার শাস্তি না হওয়ার তার অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে।