মাহালি সম্প্রদায়ের মুখে হাঁসি

দিনাজপুরে লিচু-আমের খাঁচা দেদার্সে বিক্রি হচ্ছে

এফএনএস (জি.এম.হিরু; দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ২১ মে, ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম
দিনাজপুরে লিচু-আমের খাঁচা দেদার্সে বিক্রি হচ্ছে

উত্তাঞ্চলের দিনাজপুরে চলছে মধু মাস। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে সরবরাহ করার জন্য বিভিন্ন ফলের বাজারগুলোতে চলছে দেশের সেরা লিচু ও আম এর সমাহার। আর এই মৌসুমে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কদর বাড়ে বাশেঁর ঝুরি বা টুকরির। ফল পরিবহনে ব্যবহৃত বাশেঁর ঝুরি বা টুকরি তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে দিনাজপুরের সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠীর নারী-পুরুষেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়,  শুরুতে চাহিদা কম থাকলেও আম-লিচু পাকার সঙ্গে বেড়ে যায় ঝুড়ি কেনার চাহিদা। মাহালী পাড়ায় তাই সকাল থেকে রাত পর‌্যন্ত চলছে ঝুড়ি তৈরির কাজ। যদিও এসব হারাতে বসেছে বিকল্প প্লাস্টিকের ঝুরি বা ক্যারেট বাজারে আসায়। তবে সহজ ব্যবহারযোগ্য দাম কম বাশেঁর ঝুরি বা টুকরির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশী। উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুরের সেরা বেদনা লিচু বোম্বাই লিচু, চায়না ৩ লিচুসহ  মিছরি ভোগ আম, লেঙড়া আম,সূর‌্যপুরী ও গোপালভোগআমসহ ফলের বাজারজাতকরনে এই ঝুরি বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে। মধু মাসে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে অনন্য স্বাদের টসটসে লাল দিনাজপুরী লিচু, আমসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল। একারণে এখন বাশেঁর টুকরী তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে দিনাজপুরে সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠী।

ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের মাহালি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা, দিনাজপুর পৌর এলাকার কসবা আদিবাসী পাড়া, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালী পাড়াসহ কয়েক গ্রমের, ফুলবাড়ীর দৌলতপুর ইউপির জয়নগর গ্রামের মাহালি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা। তাদের এখন চলছে মওসুম।

মাহালি সম্প্রদায়ের লোকজন এখনও কমবেশি সবাই বাপ-দাদার ঐতিহ্যবাহী পেশা ধরে রেখেছেন। বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ঝুরি, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খলইসহ নানান জিনিস তৈরি করেন তারা।িি

দিনাজপুরের সাওতাল সম্প্রদায়ের মাহালি জনগোষ্ঠী তৈরি করে এসব খাঁচা বা টুকরি। দিনাজপুরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের মাহালি সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষরা, কসবা আদিবাসী পাড়ার পুষ্প মারান্ডী, অজিত মারান্ডী, জয়নগর মাহালিপাড়ায় স্টেফান সরেন ও তার স্ত্রী মিনা মার্ডি, দাউদ হাসদা, বিরামপুর পৌর এলাকার চাঁদপুর মাহালী পাড়ার কমল হেমরমরা বংশ পরম্পরায় ব্রিটিশ আমল থেকেই এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলার অন্যস্থানের মাহালী সম্প্রদায়ের লোকজনও এসব জিনিস তৈরী করেন।

দিনাজপুরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের মাহালিরা জানান, তিন ধরণের খাঁচা তৈরি করেন তারা। এক হাজার লিচু ধারণের খাঁচা ১৫০ টাকা, ৫০০ লিচু ধারণের খাঁচা ৬০ টাকা আর তিনশত লিচু ধারণের খাঁচা ৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। এখানে ২০টিরও অধিক পরিবার এই বাঁশ শিল্পের উপরে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিদিন গড়ে ১০টি ছোট বড় খাঁচা তৈরি করতে পারে প্রতিজন কারিগর। খাঁচা তৈরির কাঁচা মাল হিসেবে ব্যবহৃত বাঁশটি প্রথমে কেঁটে শুকানো হয়। একদিন শুকানোর পরের দিন তৈরি করা হয় লিচুর খাঁচা বা টুকরী।

কসবা আদিবাসী পাড়ার মাহালিরা জানান, এখন বাঁশের দাম বেশি। বাঁশ কিনে এনে দিনে ৮-১০টি ঝুড়ি তৈরি করতে পারেন।তারা বলেন, একসময় প্রতিযোগিতা করতাম ঝুড়ি তৈরির। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই, কারণ আমের জন্য প্লাস্টিকের ক্যারেট ব্যবহার করায় শুধুই লিচুর ঝুড়ি তৈরি করছি। এসময় তারা বলেন, ঝুড়ি তৈরির প্রধান উপকরণ বাঁশের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমে গেছে। বাঁশের দাম বাড়লেও ক্রেতারা আগের দামেই ঝুড়ি কিনতে চান ।

মাহালিরা বলেন, এখন একটি বাঁশ কিনতে হয় ২৫০-৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। একটি বাঁশ থেকে সর্বোচ্চ ৬-৭টি ঝুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি লিচুর ঝুড়ি বিক্রি হয় ১০০-১৫০ টাকায়।

এই  শিল্পকে  বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্টপোষকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন।  পিছিয়ে পড়া মাহালী সম্প্রদায় কে সামনের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। এই  শিল্পকে  বাঁচিয়ে রাখতে পিছিয়ে পড়া মাহালী সম্প্রদায় কে সামনের কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা উচিত সরকারের।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে