ইশরাকের শপথে আর বাধা নেই: হাইকোর্টে রিট খারিজের পর নতুন মোড় রাজনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ২২ মে, ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
ইশরাকের শপথে আর বাধা নেই: হাইকোর্টে রিট খারিজের পর নতুন মোড় রাজনীতিতে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের পথে আর কোনো আইনি বাধা রইল না। তাকে মেয়র হিসেবে শপথ নিতে না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে করা রিট আবেদন হাইকোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরে চলা আইনি অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল, আর ইশরাককে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাও পেল নতুন মাত্রা।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিটটি খারিজ করে দেন বৃহস্পতিবার (২২ মে)। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রিট আবেদনকারীর এ ধরনের মামলা করার এখতিয়ার নেই এবং এই বিষয়ে রিট করার উপযুক্ত ফোরাম হাইকোর্ট নয়।

এর আগে গত ১৪ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ জনস্বার্থে এই রিটটি করেন। তিনি শুধু গেজেট স্থগিত নয়, বরং নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানান। রিটের পরদিন থেকেই নগর ভবনের সামনে আন্দোলনে নেমে পড়ে ইশরাকের সমর্থকরা। টানা এক সপ্তাহ নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে ২ লাখ ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের সেই ফল বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র ঘোষণা করেন।

পরবর্তীতে ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আইনগত জটিলতার কথা বলে শপথ অনুষ্ঠান আটকে রাখে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ইশরাক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। তার সমর্থকরাও সেই দাবির সাথে একমত পোষণ করে রাজপথে আন্দোলনে নামে।

হাইকোর্টে রিটের শুনানির সময় রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন ও জহিরুল ইসলাম মুসা। অন্যদিকে ইশরাকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল এবং এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান ও খান জিয়াউর রহমান।

আদালতের আদেশের পর ইশরাকের আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর আর কোনো আইনি জটিলতা নেই। এখন সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে শপথের ব্যবস্থা করা। তা না হলে তা আদালতের আদেশ অমান্য করার সামিল হবে।

অন্যদিকে রিটকারী পক্ষ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, যেহেতু তারা আপিল করবে, তাই বিষয়টি আবার বিচারাধীন হয়ে পড়বে এবং এর মধ্যে শপথ অনুষ্ঠান আইনগতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ইশরাক হোসেন বিএনপির বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সন্তান। রাজনৈতিক ইতিহাস, দলের অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং ঢাকার রাজনীতিতে তার পরিবারের ঐতিহাসিক ভূমিকা বিবেচনায়, তার শপথ গ্রহণ ও দায়িত্ব নেওয়া শুধু একটি প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নয়, বরং রাজধানীর রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে