ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণে আইনি বাধা কাটিয়ে ওঠায় বিষয়টিকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ হিসেবে দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ভাষায়, “এই রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে”— এবং তা কেবল একজন নেতার জয় নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার পুনরুত্থান।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে হাইকোর্ট ইশরাকের শপথে বাধা দেওয়ার একটি রিট আবেদন খারিজ করে দিলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) থাইল্যান্ডের ব্যাংককে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ফোনে প্রতিক্রিয়া জানান। উল্লেখ্য, গত ১৪ মে মির্জা ফখরুল চোখের অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যাংকক যান এবং ১৫ মে তার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। বর্তমানে তিনি সেখানকার রুটনিন আই হসপিটালে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বিচার বিভাগের উচ্চ আদালত আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে সঠিক রায় দিয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে গণতন্ত্রের আরেকটি বড় বিজয়। আমরা জানি, যখন মেয়র নির্বাচন হয়েছিল, তখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জোরপূর্বক সেই ফলাফল কেড়ে নিয়েছিল। অথচ ঢাকাবাসী তখনই ইশরাক হোসেনকে ‘জনতার মেয়র’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।”
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া ডিএসসিসির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ওই ফলাফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে। ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন তাকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ করে। তবে ১৪ মে একজন বাসিন্দা ও আইনজীবী মো. মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে তার শপথে স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন। সেই রিটই ২২ মে খারিজ হয়ে যায়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমি আশা করব, মন্ত্রণালয় আর কোনো সমস্যা তৈরি না করে দ্রুত ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করবে এবং পরিস্থিতি সহজ করে তুলবে।”
শপথ না হওয়া পর্যন্ত ইশরাকের সমর্থকদের আন্দোলনের ফলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, “যেহেতু আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে, এখন আর সড়ক অবরোধের প্রয়োজন নেই। আমি আশা করি, সরকার এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং শপথের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে। আমাদের নেতা-কর্মীরাও জনগণের স্বস্তির জন্য রাস্তা ছেড়ে দেবেন।”
এদিকে এই সংকটের ধারাবাহিকতায় বৃহত্তর রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তার ভাষায়, “বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে— অতিদ্রুত একটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রোডম্যাপ ঘোষণা। সংস্কারের বিষয়টি চলমান, তবে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেখানে দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। যেসব বিষয়ে এখনও ঐকমত্য হয়নি, সেগুলো জাতীয় ঐকমত্য সনদের আওতায় চলমান আলোচনায় রাখা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “অতিরিক্ত টানাপড়েন বা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব এই সংকটকে আরও গভীর করবে। তাই দেশের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”