সরকার উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে: গণঅধিকার পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশ: ২২ মে, ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম
সরকার উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে: গণঅধিকার পরিষদ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। তাদের অভিযোগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক নেতাকে ‘টাকার বিনিময়ে’ প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে দলটি জানিয়েছে— অবিলম্বে এজাজকে অপসারণ না করা হলে প্রধানমন্ত্রী প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) রাজধানীর বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি দেন দলটির শীর্ষ নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাশেদ খান। এতে আরও বক্তব্য রাখেন সভাপতি নুরুল হক নুর, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

নেতারা অভিযোগ করেন, হিযবুত তাহরীর-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজনকে ডিএনসিসির প্রশাসক পদে বসিয়ে প্রশাসন এক গুরুতর ভুল করেছে। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের প্রত্যক্ষ ভূমিকার মাধ্যমেই এজাজ এই পদে আসীন হয়েছেন বলে অভিযোগ দলটির। তারা বলেন, এই নিয়োগের ফলে দেশের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক ভারসাম্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

নুরুল হক নুর বলেন, “সরকার এখন উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স ১০ মাসে পড়েছে, অথচ এখনো পর্যন্ত তারা জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের কোনো কার্যকর রোডম্যাপ নেই— না দুর্নীতির বিরুদ্ধে, না গণহত্যার বিচারে, না রাষ্ট্র সংস্কার কিংবা নির্বাচন বিষয়ে।”

নেতারা আরও জানান, উপদেষ্টা পরিষদের কিছু সদস্য সরকারের বাইরে গিয়েও দল গঠন করে আবার সরকারের ভেতরে থেকেই সেই দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন— যা শপথ ভঙ্গের সামিল। বিশেষ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও তার মন্ত্রণালয় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। অন্যদিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা তৈরি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে সরকারের আরও নানা ব্যর্থতার দিক তুলে ধরে গণঅধিকার পরিষদ জানায়,

গত এক মাসে সীমান্ত দিয়ে প্রায় ৩৫০ জন ‘পুশ ইন’-এর মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছে, যা বিজিবির কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা জনগণের স্বার্থবিরোধী।

বাজারে নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে চরম কষ্টে ফেলেছে।

এই পরিস্থিতিতে দলটি কয়েকটি দাবিও উত্থাপন করে—

১। প্রশাসক পদে বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করতে হবে এবং অবৈধভাবে নিযুক্ত প্রশাসকদের অপসারণ করতে হবে।

২। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু করতে হবে।

৩। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

৪। এনসিপির প্রতিনিধিদের সরকারের সব দপ্তর থেকে পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে।

৫। করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে দলটির নেতারা আবারও হুঁশিয়ার করে বলেন, “সরকার যদি এসব দাবি অগ্রাহ্য করে, তবে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। তখন যমুনা ঘেরাও শুধু প্রতীকী কর্মসূচি থাকবে না— বরং বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা হবে।”

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে