শিক্ষক ও ছাত্র আন্দোলনের চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অচলাবস্থা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় এই পদত্যাগ নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) ড. মো. হযরত আলী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিষয়টি কুয়েটের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, গত ১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
কুয়েটে শিক্ষকদের অসন্তোষ ও আন্দোলন দীর্ঘদিনের। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। ওই ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে রূপ নেয়। সরকার সেই চাপের মুখে আগের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস কে শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। এরপর নতুন অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার চেষ্টা চালায়।
তবে শিখরে পৌঁছানোনি পরিস্থিতি। গত কয়েক মাস ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। শিক্ষক সমিতি একাধিকবার প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এনে কর্মবিরতি ঘোষণা করে। ৪ মে থেকে শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছেন। ১৯ মে ড. হযরত আলী ঢাকায় যান দাপ্তরিক কাজে, তার পর থেকে ক্যাম্পাসে তাঁর উপস্থিতি নেই। একই দিনে শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীদের যৌথ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের অপসারণ ও নতুন উপাচার্য নিয়োগের দাবি তোলা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মে শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভায় দাবি করা হয়, ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্তদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ৬ মে সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ নেন, যার মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো অন্তর্ভুক্ত।
এই চলমান সংকটের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী এবং বিশাল সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মচারী আটকে রয়েছেন। শিক্ষার মান রক্ষা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে দ্রুত ও সুষ্ঠু সমাধানের প্রয়োজনীয়তা প্রবল।