নারী শিক্ষার্থীদের জন্য চাই নিরাপদ ক্যাম্পাস

সম্পাদকীয়
| আপডেট: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৯ এএম | প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৫:১১ এএম
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য চাই নিরাপদ ক্যাম্পাস

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। নারী-পুরুষ সবার সম্মিলিত চেষ্টাই পারে আমাদের দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির পিছনে বড় যে শক্তিটি কাজ করছে তা হলো নারী শক্তি। দেশের নারীর এক বিশাল অংশ আজ গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত। যা গার্মেন্ট সেক্টর তথা আমাদের দেশকে করেছে সমৃদ্ধ। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, গবেষণায়ও কিন্তু নারীরা পিছিয়ে নেই। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানেও কিন্তু নারীদের অবদান অনস্বীকার্য। সে হিসেবে নারীরা কি সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে? বিশেষ করে সরকার পতনে ক্যাম্পাসের মেয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তারা মৃত্যুকে ভয় না করে রাজপথে নেমেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে। সে হিসেবে শিক্ষাঙ্গনের নারী শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদ তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। বিশেষ করে বিগত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছিল ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য। এতে করে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন অন্যায়-অত্যাচারের ঘটনা প্রতিনিয়ত শিক্ষাঙ্গনে সক্রিয় থাকতো। তবে এই সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই। এখন সবার প্রত্যাশা নিরাপদ ক্যাম্পাসের। সম্প্রতি রাজধানীতে শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিষয় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বক্তারা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীদের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং শিক্ষাঙ্গনে নারীদের নিরাপদে থাকার বিষয়ে জোর দাবি জানান। আমরা তাঁদের এমন বক্তব্যকে সমর্থন করছি সাথে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পত্রপত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনের সময় গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিনথিয়া মেহেরিন। তিনি বলেন, পেছন থেকে মাথায় রড দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়। মাথা ফেটে যাওয়ায় ১০টি সেলাই দিতে হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েও আন্দোলনকারী কি না, সে প্রশ্ন বারবার শুনতে হয়েছে। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শুধু সিনথিয়া নয়, এমন ঘটনা নারী শিক্ষার্থীদের সাথে অনেক ঘটেছে। নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নারী শিক্ষার্থীরা অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় নারীরা যেভাবে এগিয়ে এসেছিলেন, তাতেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ভিত্তি তৈরি হয়। নারী শিক্ষার্থীদের এমন অবদানের দিক বিবেচনায় শিক্ষাঙ্গনকে নারীদের জন্য নিরাপদ গড়ে তোলা জরুরি বলে আমরা মনে করছি। একজন নারী শিক্ষার্থী যখন প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসেন, সে সময়টা তাঁর জন্য নাজুক থাকে। এ সময়েই তাঁদের জন্য হলে আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের নারীরা স্বস্তিতে নেই। শুধু নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর কথা বললে হবে না, শিক্ষাঙ্গণ থেকেই পরিবর্তন আসতে হবে। শিক্ষায় নারীর আরও অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।