চট্টগ্রামে মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব: প্রতিরোধে সচেতনতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন

এফএনএস | প্রকাশ: ২২ মে, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
চট্টগ্রামে মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব: প্রতিরোধে সচেতনতা ও প্রস্তুতির প্রয়োজন

চট্টগ্রামে চলমান তীব্র তাপদাহ এবং উচ্চ আর্দ্রতার ফলে নগরীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা মৌসুমি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের শয্যা তো বটেই, বারান্দার মেঝেও পূর্ণ করে তুলছেন। এমন পরিস্থিতি শুধু উদ্বেগজনকই নয়, বরং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতির দিকটিও তুলে ধরে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ (চমেক) বিভিন্ন হাসপাতালের মেডিসিন ও শিশু বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়, হিট স্ট্রোক, ডায়রিয়া, ডিহাইড্রেশন ও চর্মরোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বাড়ার খবর প্রমাণ করে যে, গ্রীষ্মের এ সময়টিতে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বেশি প্রস্তুত ও সক্রিয় রাখা জরুরি। বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত সেবা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা এখন সময়ের দাবি। আবহাওয়ার যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে-তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই করছে, আর আর্দ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে শরীরের স্বাভাবিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়ে হিট স্ট্রোক ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর, সর্দি-কাশি, চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার মতো রোগে। চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, শিশুরা টিনশেড স্কুল বা রোদে খেলাধুলার কারণে অতিরিক্ত ঘামে, পানির অভাবে এবং দূষিত খাবারের সংস্পর্শে এসে এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে উঠে এসেছে কিছু জরুরি ব্যবস্থা-যেমন শিশুদের পর্যাপ্ত পানি খাওয়ানো, হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরানো, বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা এবং গরমে ঘাম মুছে দেওয়া। তবে এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু পারিবারিক পর্যায়ের সচেতনতাই যথেষ্ট নয়। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন-যেখানে হাসপাতালগুলোতে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা, ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো এবং জনসাধারণকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে বিপদের আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। আবহাওয়ার বৈচিত্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান বাস্তবতায় মৌসুমি রোগ এখন আর অনিয়মিত নয়, বরং নিয়মিত চ্যালেঞ্জ। তাই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধি, নাগরিক সচেতনতা এবং পরিবেশবান্ধব নগর ব্যবস্থাপনাই হতে পারে এ সংকট মোকাবিলার একমাত্র পথ।