বাণিজ্যিকভাবে আম্রপলি ও হিমসাগরসহ নানা জাতের আম চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের এ্যাড. সাহাদাত হোসেন। ১৯৯৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ শতক জমিতে আম্রপলি জাতের আম চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন তিনি। প্রথমে তিনি ৪০ শতক জমিতে আম্রপলি জাতের ৫০টি আমের গাছ রোপণ করেন। দুই বছরের ব্যবধানে ১৯৯৫ সালে ঐ আম বাগান থেকে ১ লাখ টাকার আম বিক্রি করেন। এতে তিনি বেশ লাভবান হন। এ বছর এ বাগান ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১৭ মে দেয়াড়া গ্রামে সিনিয়র আইনজীবি এ্যাড. সাহাদাত হোসেনের বাগানে গেলে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। এ্যাড.সাহাদাত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ১৯৭৪ সালে দিঘলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৭৬ সালে বিএল কলেজ থেকে এইচএসি পাশ ও অনার্স শেষ করে আজমখান কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করে খুলনা সিটি ল কলেজ থেকে এল এল বি শেষ করে তিনি আইন পেশায় আত্ননিয়োগ করেন। ক্লাসের প্রথম দিনই কামরুল হাসান স্যার বলে শিক্ষা জীবন শেষে চাকরীর পেছনে না ঘুরে ব্যবসা বা কৃষি পেশায় নিজেকে কাজে লাগালে সবচাইতে দ্রুততম উন্নয়ন করা সম্ভব। তাই শিক্ষা জীবন শেষ করে দেয়াড়া গ্রামে (দিঘলিয়া উপজেলা মোড় থেকে ৩০০ মিটার দক্ষিণে) নিজস্ব বাড়িতে ফিরে এসে বাগান করার দিকে মন দেন। তিনি প্রথমে অন্যান্য কৃষি কাজের ফাঁকে মুরগীর চাষও করেছেন। পরবর্তীতে তিনি নার্সারী ব্যবসার পাশাপাশি আম চাষে মননিবেশ করেন।
এ্যাড. সাহাদাত হোসেন আইন ব্যবসার পাশাশাশি বেছে নেন কৃষি। প্রথমে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছের একটি নার্সারী তৈরি করেন। এতে তিনি বেশ লাভবান হন। পরবর্তিতে তিনি কৃষি কাজে ব্যাপক প্রসার ঘটার জন্য আম চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন।
তাই এ্যাড. সাহাদাত হোসেন নিজ পৈত্রিক জমিতে ১৯৯৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ শতক জমিতে ২০০ শত আমের গাছ রোপণ করে আম্রপলি জাতের আম চাষ শুরু করেন। একটি চারা আম গাছে আম ধরা পর্যন্ত তার খরচ হয় প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। প্রথম বছর ২০০০ সালে গড়ে প্রতিটি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি আম পেয়েছিলেন।
প্রতি কেজি আম বিক্রি করেছিলেন ৪০ থেকে ৬০ টাকা। এ বছর একটি আম গাছে পরিচর্যা খরচ হয়েছে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এবার গড়ে প্রতিটি গাছে ১ থেকে ২ মন আম পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে যেমন একটি গাছের পরিচর্যা খরচ বাড়বে তেমনি আমের সংখ্যাও বাড়তে থাকবে।
আম চাষ লাভবান হওয়ায় এ্যাড. সাহাদাত হোসেন পর্যায়ক্রমে ১০ একর জমিতে প্রায় ৫০০ হাজার ৭০০ আম্রপলি, হাড়িভাঙ্গা, ব্লাক ন্যাংড়া, মল্লিকা, হিমসাগরসহ নানা জাতের আম গাছ রোপণ করে বাগান করে ফেলেছেন। এ্যাড. সাহাদাত হোসেনের আম চাষ দেখে আশেপাশের বহু কৃষক তাদের জমিতে আমের চাষ করেছে। তার বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় আম চাষের উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ্যাড. সাহাদাত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি প্রথম দিকে এ আম চাষে উৎসাহ পেয়েছেন তার সহধর্মিণী অধ্যক্ষ রওশন আরার কাছ থেকে। তাঁর স্ত্রী ছিলেন খুলনার স্বনামধন্য সরকারী কলেজের একজন অধ্যক্ষ। তথাপিও তিনি তাঁর পেশাদারী দায়িত্ব পালনের পরও ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়ার পাশাপাশি স্বামীর আম বাগানের প্রতি যথেষ্ট সময় দিতেন। বর্তমানে শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা নিজ নিজ লেখাপড়া ও পেশাদারী দায়িত্ব পালন করে পিতার আম বাগানে সময় দেন। তিনি বর্তমানে আম বিক্রয়ের ব্যাপারে উৎকন্ঠিত। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তাদের পরিবারের সকলের যৌথ এ আম চাষে ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এখানের আমগুলো ক্যামিকেল মুক্ত। প্রকৃতির সবুজ আম। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এ আম সংগ্রহ করতে শত শত লোক ভীড় জমাচ্ছে। শুধু তাই নয় অনেকে অন লাইনে আমের অর্ডার দিয়ে আম সংগ্রহ করছে। প্রকৃতির মজাদার সকল আম আম্রপলি, হিমসাগর, ন্যাংড়া, মল্লিকাসহ নানা জাতের আম এখানে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। তাই তিনি তাঁর এ আম বাগানের নাম দিয়েছেন আমের স্বর্গ (গঅঘএঙ ঐঅঠঊঘ) বিভিন্ন এলাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে স্বাস্থ্য সন্মত কারবাইড ও ফরমালিন মুক্ত আম এখানে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যাচ্ছে। তাইতো লোকজন প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আম কেনার জন্য দিঘলিয়া ছুটে আসছেন।
শুধু আম নয় কাঁঠাল লেবুসহ অন্যান্য ফলের চাষ করেছেন তিনি। পাশাপাশি বাগানের মাঝে জলাশয় সৃষ্টি করে সেখানে রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ নানা জাতের সাদা মাছও চাষ করেছেন তিনি। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, এখানে ২/৩ কেজি ওজনের মাছও এ জলাশয়গুলোতে আছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ বলেন এই অঞ্চল আম চাষের জন্য আবহাওয়া ও জলাবায়ু উপযোগী। এ অঞ্চলে আম চাষ করে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তিনি এই আম চাষে সাফলতার জন্য আমাদের দপ্তর থেকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্য কেউ যদি এ ধরণের বাগান করতে চাই তাকেও আমরা পরামর্শ দেবো।
তবে এ্যাড.সাহাদাত হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন ‘সরকারিভাবে যদি আমাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ ও সার কীটনাশক সরবরাহ করা হয় তাহলে আরো আম চাষে বিপ্লব ঘটাতে পারব।’