বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের অন্যতম অভিজ্ঞ মুখ, অলরাউন্ডার রুমানা আহমেদের জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে পড়ার বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে। দীর্ঘদিন দলের বাইরে থাকা, কোনোরকম ক্যাম্পে না ডাক পাওয়া ও যথাযথ ব্যাখ্যার অভাবে ক্ষুব্ধ রুমানা এবার সরাসরি বিসিবির (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সামাজিক মাধ্যমে তার হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্টে রুমানা অভিযোগ করেন, গত তিন বছর ধরে তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে দলে রাখা হচ্ছে না এবং এই পরিস্থিতিকে তিনি তার "ক্যারিয়ার ধ্বংস" বলেই আখ্যা দিয়েছেন। রুমানা আহমেদ সর্বশেষ ২০২২ সালে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলেছিলেন। এরপর একবার মাত্র, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এশিয়া কাপের আগে ক্যাম্পে ডাক পেলেও আর কোনো স্কোয়াড বা ক্যাম্পে তার নাম নেই।
রুমানার ভাষ্যে, "ভালো খেললে দলে আসব, খারাপ খেললে বাদ যাব — এটাই নিয়ম। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। এতদিন দলে না থাকাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি তো এখনও ফর্মে আছি, ঘরোয়া ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছি, বোলিংয়েও পারফর্ম করছি। তাহলে আমাকে কেন দলে রাখা হচ্ছে না?"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, শুধু তাকেই নয়, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সালমা খাতুনকেও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। দুজনের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক থাকা সত্ত্বেও নতুন খেলোয়াড়দের জায়গা করে দিতে তাদের উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন রুমানা।
এই বিষয়ে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন সংবাদমাধ্যমকে জানান, "একজন খেলোয়াড় দলে নেই কেন, তার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। ফর্ম ও বয়স গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। অভিযোগ থাকলে বোর্ডে লিখিত দিতে হবে। ফেসবুকে পোস্ট দিলে আমি কিছু বলব না।"
তবে রুমানা মনে করছেন, যতবারই বোর্ড কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রতিবারই প্রতিশ্রুতি মিলেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ফাহিম স্যার, নির্বাচক শিপন ভাই এবং বাশার ভাইয়ের সঙ্গেও বহুবার কথা বলেছি। তারা বলেছে ‘দেখছি’। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।"
রুমানা বলেন, "আমার তো অন্তত জানার অধিকার আছে, কেন আমি দলে নেই। তাই এই স্ট্যাটাস দিয়েছি। এটিই আমার শেষ চেষ্টা। এবার যদি বোর্ড থেকে কোনো জবাব না আসে, তাহলে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে ক্রিকেটকে বিদায় জানাব, বোর্ডের চুক্তি থেকেও নিজেকে সরিয়ে নেব।"
তিনি স্পষ্ট করে বোর্ডের উদ্দেশে লিখেছেন, "দয়া করে আমাকে চূড়ান্ত সমাধান দিন। তিন বছর ধরে কোনো কারণ ছাড়া বাইরে থাকা হাস্যকর নয়। আমি স্পষ্টভাবে ন্যায়বিচার চাই।"
নারী ক্রিকেটের এক সময়ের সুপারস্টার হিসেবে খ্যাত রুমানার এই স্ট্যাটাস এবং বক্তব্য বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের কাঠামো ও দলে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ গঠনে সিনিয়রদের প্রতি এমন অবহেলার পেছনে বোর্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।