নির্বাচন যত দেরি হবে, আমাদের সংকট ততই গভীর হবে: : আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৬ মে, ২০২৫, ০৫:২৩ পিএম
নির্বাচন যত দেরি হবে, আমাদের সংকট ততই গভীর হবে: : আমীর খসরু

দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ধারাবাহিক বক্তব্যে তিনি সরকারের জবাবদিহিতার অভাব, মিডিয়ার ওপর চাপ এবং জাতীয় সংস্কৃতি অবহেলার চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, দেশের সংস্কৃতি ও শিল্পের উন্নয়নে দলীয়ভাবে ‘ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি’ নামে একটি নতুন কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, গণতন্ত্রহীনতা ও অগণতান্ত্রিক শাসনের সময়গুলোতে মিডিয়ার ওপর চাপ প্রয়োগ করে তা নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা দেখা যায়। তার মতে, “যে-ই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে চাইলে তারা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়—এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে।” তিনি বলেন, মিডিয়া সরাসরি সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য না করলেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জবাবদিহিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় সোমবার (২৬ মে) ঢাকার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে।

আমীর খসরু বলেন, “আমরা যদি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, এবং স্বাধীন মিডিয়া ফিরে পেতে চাই—তাহলে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া বিকল্প নেই।” তিনি উল্লেখ করেন, “সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই পারে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে আনতে। আর এই প্রক্রিয়া যত দেরি হবে, আমাদের সংকট ততই গভীর হবে।”

এর আগে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু দেশের সংস্কৃতির অবমূল্যায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল।

এই আলোচনায় তিনি জানান, বিএনপি একটি নতুন সংস্কৃতি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে, যার নাম ‘ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি’। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের লোকসংগীত, পল্লী গান, বাউল সংগীত এবং গ্রামীণ ঐতিহ্যকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

আমীর খসরু বলেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে যে পল্লীগান, নাটক, কামার-কুমার-তাঁতির নান্দনিকতা আছে, তা আন্তর্জাতিক অর্থনীতির সাথেও সম্পৃক্ত। কিন্তু আমরা কখনো সেভাবে মূল্যায়ন করিনি।” তিনি আরও জানান, “এই উদ্যোগের মাধ্যমে একদিকে সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবন হবে, অন্যদিকে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

তিনি নজরুল প্রসঙ্গে বলেন, “বাঙালির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চেতনায় নজরুল অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আমরা তার সাহিত্য-দর্শনকে প্রাত্যহিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি—এটা আমাদের ব্যর্থতা।”

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী। বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, নাট্যকার বাবুল আহমেদসহ অনেকে।

সবশেষে আমীর খসরু বলেন, “বাংলাদেশ আজ একটি বড় পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে মিডিয়া, জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে