বাংলাদেশের অপরাধ ইতিহাসে বহুল আলোচিত নাম সুব্রত বাইন। নব্বইয়ের দশকে ঢাকার মগবাজারের ‘বিশাল সেন্টার’ ঘিরে অপরাধজগতের উত্থান ঘটানো এই শীর্ষ সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর অবশেষে কুষ্টিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়েছেন। তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন আরেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন সজাগ, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও ফিরে এসেছে পুরোনো আতঙ্কের স্মৃতি।
মঙ্গলবার (২৭ মে) ভোর থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা মসজিদের পাশের একটি তিনতলা ভবনে অভিযান চালায় সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল। স্থানীয় সময় বেলা সোয়া তিনটার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে। ভবনের নিচতলায় অভিযান চালিয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় সুব্রত বাইন এবং দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় তাঁর সহযোগীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযান শেষে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, দশটি ম্যাগাজিন এবং গুলি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ছাত্রদের ভাষ্যমতে, বাড়িটির নিচতলা দুই মাস আগে একজন স্থানীয় বাসিন্দার মাধ্যমে ভাড়া নেওয়া হয়। অতিথি পরিচয়ে আসা একজন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি সেখানে নিয়মিত থাকতেন, তবে অধিকাংশ সময় তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে ছিলেন। ছাত্রদের মতে, তাঁরা কখনো ভাবেননি যে এমন ভয়ংকর কেউ তাদের আশেপাশে অবস্থান করছিলেন।
গ্রেপ্তারকৃত সুব্রত বাইন নব্বইয়ের দশকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ এবং হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে এক নৃশংস সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন। একসময় মগবাজারের ‘বিশাল সেন্টার’ ছিল তাঁর অপরাধ কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। তিনি এতটাই berাচ্ছন্ন ছিলেন যে অনেকে তাঁকে চিনতেন ‘বিশালের সুব্রত’ নামে। ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ঘোষিত ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় তাঁর নাম ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি রয়েছে এবং একসময় তাঁকে ধরিয়ে দিতে সরকার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
সুব্রত বাইনের সহযোগী মোল্লা মাসুদও ছিলেন সমান কুখ্যাত। রাজধানীর মতিঝিল ও গোপীবাগ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতেন তিনি। জানা যায়, সুব্রত বাইনের হাত ধরেই তিনি অপরাধ জগতে প্রবেশ করেন। তাঁর বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক হত্যা মামলা—যেমন সাবেক সাংসদ কামাল মজুমদারের ভাগনে মামুন হত্যা, পুরান ঢাকায় ‘মুরগি মিলন’ হত্যা এবং খিলগাঁওয়ে ‘ট্রিপল মার্ডার’ মামলাসহ চাঁদাবাজির অসংখ্য অভিযোগ। ২০১৫ সালে তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হন এবং জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতেই ‘আবু রাসেল মো. মাসুদ’ নামে বসবাস করতে থাকেন। সেখানেই তিনি ভারতীয় এক নারীকে বিয়ে করেন।
অভিযানের বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে অবগত ছিল না। কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। স্থানীয়দের মুখে ঘটনাটি শুনেছি।” আইএসপিআর থেকে জানানো হয়, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অভিযানসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।