জামালপুরের জেলাজুরেই মানুষের অন্যতম প্রিয় খাবারের তালিকায় জনপ্রিয় হচ্ছে টক দই। আর এই টক দইয়ের কদর রয়েছে সারা দেশেই। জামালপুর জেলাসহ ৭ উপজেলায় অনেক এলাকাতেই কৃষকের ঘরে ঘরে মাটির পাতিলে গরু ও মহিষের দুধ দিয়ে তৈরী হয় ওই টক দই। আগে সব জায়গাতেই মিলত এই টক দই। কিন্তু কালের বিবর্তনে এই টক দই এখন হারিয়েই যেতে বসেছে।
জামালপুর জেলার উত্তর সীমান্তের বকশীগঞ্জ উপজেলায় বেশ কিছু এলাকায় এই টক দইকে বাঁচিয়ে রেখেছে দইওয়ালা কৃষকরা। বকশীগঞ্জ বাজার, সূর্যনগর বাজার ও জব্বারগঞ্জ বাজার টক দইয়ের জন্য খুবই পরিচিত। এখানে শতাধিক পরিবারের লোকজন সপ্তাহের প্রতি শনিবার মঙ্গলবার ও বৃহস্মপতিবার মহিষের ওই টক দই বিক্রি করে থাকেন। টক দই বিক্রি করে তারা মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। দইওয়ালা মো. রহিম মিয়া জানান, ‘অনেক আগে থেকে আমরা মহিষ লালন-পালন করি। দুধ বিক্রি করি না। আমরা ওই দুধ দিয়ে টক দই বানিয়ে বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। এতে আমাদের সংসার ভালো চলে। মো. বাবু নামে আরেক দই বিক্রেতা জানান, টক দই খেলে অনেক রোগের উপশম হয়। গ্যাস্ট্রিক, হজমের সমস্যায় উপকার হয়। ডায়াবেটিস রোগীদের মিষ্টি দই খাওয়া নিষেধ। তাই এই টক দই এর চাহিদা বেশী। আমরা সপ্তাহে দুই দিন দই বিক্রি করি। আমাদের এই দই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইলে অর্ডার করেও নিচ্ছেন মানুষ।
নতুন মাটির পাতিল কিনে প্রথমে ধুয়ে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নেয়ার পর আগুনের তাপ দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরে মহিষ বা গরুর দুধ ওই পাতিলে রেখে মুখ কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ২ থেকে ৩ দিন পর দুধ ঘন হয়ে রূপ নেয় টক দইয়ে। এ কাজটি করে থাকেন সাধারণত বাড়ির গৃহিনীরা। গৃহিনী মরিয়ম বেগম বলেন, বাজারে এ টক দই ১৪০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। এক সময় এই অঞ্চলের মানুষ টক দই আর খাঁটি আখের গুড় নিয়ে যেত আত্মীয়ের বাড়িতে। এতে খুশিও হতেন আত্মীয়স্বজনরা। এখনো এ এলাকার মানুষের অন্যতম স্বাদের খাবার এটা। তবে এখন এই দই আর সব জায়গায় পাওয়া যায় না। জামালপুর থেকে আসা ক্রেতা মো. হোসেন আলী জানান, আমরা এই বাজার থেকে টক দই কিনে খাই। এ দই খেতে অনেক সুস্বাদু।
জামালপুর মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাদিম হাসান জনকন্ঠকে জানান , দইয়ের সবচেয়ে উপকার হচ্ছে এতে প্রোবায়োটিক থাকায় হজম শক্তি বাড়ায়।
তাছাড়া মিষ্টি দইয়ের চেয়ে ওই টক দই অনেক ভালো। কেননা মিষ্টি দইয়ে চিনি মোশানো হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ডায়েবেটিস রোগীদের জন্য খাওয়া সমস্যা। এজন্য হয়তোবা অনেক ডাক্তার রোগীদের টক দই খাওয়ার জন্য সাজেস্ট করে থাকেন।