ঈদ মানেই খুশি। আর ঈদ এলেই সবচেয়ে বেশি খুশি হয় শিশুরাই। তবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা ঈদের আনন্দে শামিল হতে হতাশা ভরা মুখ নিয়ে খুঁজে ফিরে একটু সহানুভূতি। প্রজন্মের সুবিধা বঞ্চিত, সমাজের অবহেলিত ছেলে মেয়েরা বিত্তবানদের পানে চেয়ে থাকে আশাতুর চোখে। তারা ভাসমান, তারা ঠিকানহীন, পথ-ই তাদের ঠিকানা, জন্ম তার পথে, তাই হয়তো বা তাদের নাম হয়েছে পথশিশু। এখন সমাজে পথশিশু নামটি ব্যাপক পরিচিত। পথশিশুদের ঈদ যেন পথে না হয়। তাদের ঈদের এই দিনটি কাঁটে বিত্তবানদের দয়ার উপর।
মুসলমানদের বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের একটি হলো ঈদুল আযহা। যাহা কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত। আরবি ঈদুল আযহা এর আভিধানিক অর্থ হল ত্যাগের উৎসব, আর আরবি কুরবানি শব্দের অর্থ যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। শব্দটি আবার ত্যাগ করা, বিসর্জন দেয়া ও উৎসর্গ করা অর্থ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঈদুল আযহার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো আল্লাহর নামে কুরবানি করা। পশু জবেহ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় বলে এ পশু জবেহকেই কুরবানি বলা হয়। নিয়ম অনুসারে কুরবানির গোস্ত ৩ ভাগ করে। একভাগ কুরবানিদাতা, একভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বাকী একভাগ গরিবদের মাঝে বিতরণ করতে হবে।
আমরা জানি ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের আনন্দ একার নয়, যে খুশি ছড়িয়ে যাবে সবার মাঝে। ধনী-গরিব কোন ব্যবধান নয়। সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করে তা হবে মহা আনন্দের উৎসব। যে খুশির কোন সিমানা থাকবে না। আমাদের সমাজে সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা রয়েছে। যারা আজ পথশিশু হিসাবে পরিচিত। তাদেরও ঈদ আছে। রাজধানী সহ সারাদেশে কয়েক লাখ পথশিশু রয়েছে। তারা পরিবার বা পরিবারহীন ভাসমান জীবন যাপন করে।
দেশে বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দেশের রাজনৈতিক দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি এসব নানাবিধ কারণে বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যা। ইউনিসেফের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সার্ভে অন স্ট্রিট চিলড্রেন ২০২২ শীর্ষক জরিপ প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে। জরিপে রাস্তাঘাটে বসবাসকারী শিশুদের মোট সংখ্যা না থাকলেও ইউনিসেফ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ সংখ্যা ১০ লক্ষাধিক হতে পারে। যাদের ৮০ ভাগেরই জন্ম হয় পথে। তাদের বেড়ে ওঠা ও বসবাস ফুটপাথে। স্বজনহারা অনেক শিশু শহরে এসে এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। তাদের পথ-ই ঠিকানা। যাদের দেখভাল করার কেউ নেই। তাদের দিন কাঁটে অন্যের দয়ার উপর। অবহেলা-অযত্নে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের টোকাই, ছিন্নমূল বা পথশিশু বলা হয়। এরাও আমাদের এই সমাজেরই সন্তান।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। আর ঈদ এলেই শিশুদের খুশির সিমানা ছাড়িয়ে যায়। বাবা-মার কাছ থেকে নতুন জামা-কাপড়, ঈদ সেলামি পেয়ে এবং পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিনোদন উপভোগ করে শিশুরা। ঈদকে ঘিরে বাবা-মার কত পরিকল্পনা থাকে শিশুদের নিয়ে। তবে সব শিশুর ভাগ্য এক রকম হয় না। আমাদের আশপাশে অনেক শিশুই রয়েছে ঈদে নতুন পোশাক পড়তে পারে না। সামাজিক অসংগতির শিকার হচ্ছে অনেক শিশু। এদের অধিকাংশই পথশিশু। অভুক্ত মলিন নিষ্পাপ এসকল শিশুরা অধিকাংশই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন।
আমাদের সমাজে প্রচুর ধনী ব্যক্তি আছেন। তারা নিজের জন্য অনেক খরচ করেন। ঈদ নিজের বচ্চাদের কেনাকাটায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। আমরা যদি পথশিশুদের কথা একটু ভেবে নিজের প্রচুর কেনা কাটার মধ্য থেকে একটু খরচ বাঁচিয়ে পথশিশুদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া সম্ভব হয়, তবে পথশিশুরাও ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে পারবে। পথশিশুদের মুখে হাঁসি ফুটাতে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। শুধু প্রয়োজন একটু সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব। পথশিশুরা আমাদের সমাজের সন্তান। তারা আমাদের ভালোবাসার দাবিদার। এসব পথশিশুদের পিতা মাতা সহ পরিবার পরিজন চরম দারিদ্র সীমার নিচে মানবেতর জীবন যাপন করে। এদের অনেকের সংসার চলে ভিক্ষার উপর। আমরা সবাই মানুষ। আমাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব রয়েছে, তাই মানুষের কল্যাণে বিত্তবানদের সাহায্য করার হাত বাড়াতে হবে। আশেপাশে পথশিশু ও সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রতি আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতা দিতে হবে। যাতে তাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। পথশিশুদের ঈদ যেন পথে-পথে না হয়।
লেখক: প্রকাশ ঘোষ বিধান; সাংবাদিক ও কলামিস্ট