ভোগান্তিতে নদী পাড়ের বাসিন্দারা

মহেশপুরের ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার

এফএনএস (মহেশপুর, ঝিনাইদহ) : | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
মহেশপুরের ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার

মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী ইছামতী নদীতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার হচ্ছে মানুষ। শ্যামকুড় ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর হালদারপাড়ায় এমনই চিত্র দেখা গেছে। এতে বহু বছর ধরে ভোগান্তিতে আছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। তিন পাশে ইছামতী নদী হওয়ায় হালদারপাড়া গ্রামে প্রবেশের একমাত্র উপায় বাঁশের সাঁকো। বহুকাল ধরে হালদারপাড়ার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন।শ্রীনাথপুর হালদারপাড়ার তিনপাশে ইছামতি নদী। পশ্চিমে কেবল ভারতীয় স্থল সীমান্তের কাটাতার। হালদার পাড়ায় প্রবেশের জন্য ইছামতি নদী পার হওয়ার বিকল্প নেই। তবে ইছামতি নদী পার হয়ে হালদার পাড়ায় প্রবেশের জন্য নেই কোনো সেতু বা সড়ক। দীর্ঘদিন ধরে হালদার পাড়ার বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হচ্ছেন। ফল, ফসল ও ভারী জিনিসপত্র বহনেও চরম ঝুঁকিতে পড়েন হালদার পাড়ার বাসিন্দারা।স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হয় ইছামতি নদী। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে দেখা দেয় আতঙ্ক। বিভিন্ন সময় সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় ঘটে দুর্ঘটনা।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ইছামতি নদীতে একটা ব্রিজ তৈরির দাবি জানিয়ে আসছে গ্রামের লোকজন। যে কোন নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা অঙ্গিকার করেন পাশ করার পরেই এখানে ব্রিজ করে দিব। কিন্তু পরে তাদের কথা কেউ মনে রাখেনি।এছাড়া চাষাবাদের জন্য আধুনিক মেশিন হালদারপাড়ায় নেয়া যায় না। উৎপাদিত ফসল আনা-নেয়ার কাজেও প্রায়ই ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। গ্রামে নেই কোনো রাস্তা ফলে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।একটি সেতু বদলে দিতে পারে হালদার পাড়ার মানুষের জীবন। এভাবেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয় হালদার পাড়ার মানুষেরা। তিন পাশে ভারতের ইছামতি নদী আর এক পাশে ভারতের নদীয়া জেলা। দূর থেকে দেখে মনে হবে এটা বিচ্ছিন্ন কোনো এক দ্বীপ। এক সময় ৬৫ টি পরিবার বসবাস করলেও বর্তমানে সেখানে মাত্র ২৫টি পরিবার বসবাস করছে।বছরের পর বছর তারা এভাবেই ফসল পারাপার করে আসছেন বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। পাড়ার মধ্যে প্রবেশ করলেই নজর কাড়বে শুনশান নীরব পরিবেশ।এই পাড়ার পুরুষেরা একবার বাইরে কাজে বের হলে আর ফিরতে চান না। কাজ শেষে একেবারে সন্ধ্যায় বা রাতে ফেরেন। পাড়ার নারীরা ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।এই গ্রামের দুইটি অংশ রয়েছে,একটি অংশে হালদারপাড়,আরেকটিতে অন্যরা। হালদারপাড়ায় ৬৫টি পরিবার বসবাস করতো। আর অপর অংশে বসবাস করতো ২৫০টি পরিবার। শত শত বছর ধরে এই দুই এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠেছে। ভূমি অফিসের খাতায়ও শ্রীনাথপুর মৌজা দুইটি ভাগে বিভক্ত। এক নম্বর শিটে হালদারপাড়া আর দুই নম্বরে বাকি অংশ। হালদারদের অংশে ৩৫০ বিঘা জমি রয়েছে।বর্তমানে ২৫টি পরিবার বসবাস করেন,এর মধ্যে ৬ টি পরিবার মুসলিম।নদীটি ভারতীয় নদী হওয়ায় সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে। যে কারণে তাদের যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হয়। স্থানীয়ভাবে পাড়ার দক্ষিণে নদীর উপর বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে নিয়েছেন তারা। মাত্র দুইটা বাঁশের উপর তৈরি সাঁকোতে তাদেরকে চলাফেরা করতে হয়।

মুক্তিযুদ্ধ পরর্বতী সময়ে ইছামতি পাড়ের শ্রীনাথপুর হালদারপাড়া গ্রামে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করত। সে সময় গ্রামে অধিকাংশ বাসিন্দারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। সময়ের আর্বতনে অনেকে চাষাআবাদে যুক্ত হয়েছে। উর্বর ভূমি হওয়ায় সেখানে সবজি ও তুলা চাষ বেশি হয়। তবে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া না লাগার ফলে গ্রামটিতে ধীরে ধীরে বসতি কমতে থাকে। এখন ২৫টি পরিবার বসবাস করছে। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে করছেন কৃষি কাজ। গ্রামের তিনপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী ইছামতি। নদীর ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সাঁকো।

সাঁকোটার অবস্থাটাও বেহাল। তার উপর দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পণ্য পারাপার করছেন অনেকে। ওই গ্রামরে বাসিন্দা মনোরঞ্জন হালদার জানান, সেই মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুনে আসছি নদীর ওপর সেতু হবে। তবে এখনও পর্যন্ত সেতুর দেখা মিলনা। গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে অনেক কষ্ট হয়। বাঁশের সেতু থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে গেছে অনেকের। এ নিয়ে বিভিন্ন অফিসে ঘুরেও কোনো ফল পাইনি। আমি এখানে ১৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। ভালো ফলন হলেও শুধুমাত্র সেতুর অভাবে আমাদের উৎপাদিত পণ্য কম দামে বিক্রিয় করতে হচ্ছে। অন্য এলাকার মানুষেরা আমার এলাকার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাই না।পুনির্মা রানী নামের ওই গ্রামের আর এক বাসিন্দা বলেন, যাতায়াত অবস্থা খারাপের জন্য আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের বাড়িতে আসেন না। একবার আমার মেয়েটা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। রাতের আধারে সাঁকো পার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। পরের দিন যখন হাসপাতালে নিয়ে গেলাম তখন তার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়েছিল।

স্থানীয় শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামিরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, হালদার পাড়ায় একটি সেতু নির্মানের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। তবে সেতু নির্মানের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আওয়াল আমার দেশকে বলেন, ভারতীয় সীমান্তবর্তী ওই গ্রামের মানুষের দূর্ভোগের কথা আমি শুনেছি। ইতিমধ্যে সেতু নির্মানের জন্য সংশ্লষ্টি র্কতৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে