সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর মো. রাশেদ খান সিনহার চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘিরে দেশের জনমনে যে আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, তার বিচারিক প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপে পৌঁছেছে হাইকোর্ট। দীর্ঘ শুনানি শেষে উচ্চ আদালত এই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও অন্যান্য দণ্ডিত আসামিদের দায়ের করা আপিলের ওপর রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন।
বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন সোমবার (২ জুন)। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শামীমা দিপ্তী, জসিম সরকার এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার সুমাইয়া আজিজ, লাবনী আক্তারসহ অন্যরা।
মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল সোমবার (২১ এপ্রিল) এবং এটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই, রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। গুলি চালান বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
ঘটনার পাঁচ দিন পর, পাঁচ আগস্ট, সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে র্যাব ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়, যেখানে সিনহার হত্যাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপর ৩১ জানুয়ারি ২০২২, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই মামলার রায় দেন। রায়ে দুই জনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয় জনকে যাবজ্জীবন এবং সাত জনকে খালাস দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি:
১. প্রদীপ কুমার দাশ — টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি
২. লিয়াকত আলী — বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ছয় আসামি:
১. নন্দ দুলাল রক্ষিত — উপ-পরিদর্শক (এসআই)
২. রুবেল শর্মা — কনস্টেবল
৩. সাগর দেব — কনস্টেবল
৪. মো. নুরুল আমিন — বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা
৫. মো. নিজাম উদ্দিন — একই গ্রামের বাসিন্দা
৬. মো. মোহাম্মদ আইয়াজ — একই গ্রামের বাসিন্দা
রায়ের পর নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য মামলাটি ডেথ রেফারেন্স আকারে হাইকোর্টে আসে এবং কারাবন্দী দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেন।
সারাদেশের নজর এখন হাইকোর্টের রায়ের দিকে, যা এই বহুল আলোচিত মামলার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।