অচল ডিএসসিসি, টানা আন্দোলনে ভোগান্তিতে নাগরিক সেবা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০৬:৪৫ পিএম
অচল ডিএসসিসি, টানা আন্দোলনে ভোগান্তিতে নাগরিক সেবা

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় টানা অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে অচল হয়ে পড়েছে নগর ভবনসহ করপোরেশনের সব সেবা কার্যক্রম। বিএনপি নেতা ও নির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে ১৫ মে থেকে কর্মসূচি শুরু করে তার সমর্থকরা। আন্দোলনে যুক্ত হন ডিএসসিসির শ্রমিক-কর্মচারীদের একটি অংশও। ফলে নগর ভবনসহ সব আঞ্চলিক কার্যালয় ও দপ্তরে কার্যত তালা ঝুলছে।

ইশরাকের সমর্থনে আন্দোলনরত কর্মীরা নগর ভবনের মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি বিভাগীয় অফিসে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন। তাদের পক্ষ থেকে ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে টালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’— এমন নানা স্লোগান শোনা যাচ্ছে প্রতিদিন।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) সকালেও নগর ভবনের সামনে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচি চালু ছিল। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করেও নগর ভবনের ভেতরে অবস্থান নিয়েছেন এবং ফটকে তালা লাগিয়ে রেখেছেন। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ, টানা এ অচলাবস্থায় ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক অফিসগুলোতে সেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। জন্মনিবন্ধন সংশোধন, ট্রেড লাইসেন্স, কর সংক্রান্ত কাজসহ সব সেবা পেতে এসে মানুষকে ফিরে যেতে হচ্ছে। গোলাপবাগ, ধলপুর, নগর ভবন— সর্বত্রই একই চিত্র।

আন্দোলনের পেছনের প্রেক্ষাপটও বেশ জটিল। ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হলেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিলের আবেদন করে ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতের দ্বারস্থ হন ইশরাক। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে, ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল ওই নির্বাচনের ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশন এরপর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে।

তবে তাকে যেন শপথ না পড়ানো হয়, এই দাবিতে ১৪ মে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়। রিট চলাকালীন শপথ অনুষ্ঠান স্থগিত রাখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপরও আন্দোলন থামেনি। বরং হাইকোর্ট রিট খারিজ করে দিলে আন্দোলনকারীরা নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কিন্তু দীর্ঘদিনের এ অচলাবস্থায় শহরবাসীর নাগরিক সেবা বিপর্যস্ত। অনেকেই বলছেন, “এক দল লুটেছে আগেই, আরেক দল এখন লুটে নিচ্ছে। মাঝে পড়ে সাধারণ মানুষই বিপদে।”

ইশরাক হোসেনের দাবি, আদালতের রায়ের ভিত্তিতে তিনি বৈধভাবে নির্বাচিত মেয়র। শপথ পড়ানোর জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, আইনি প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত শপথ অনুষ্ঠানে অনাগ্রহ দেখিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ফলে আইনি জটিলতা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নাগরিকদের মৌলিক সেবা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে