সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে

সচিবালয় কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি, উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
সচিবালয় কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি, উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধনের মাধ্যমে প্রণীত ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার, ২৯ মে সচিবালয়ে পালিত এক ঘণ্টার কর্মবিরতির পর আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন—তাদের পরবর্তী কর্মসূচি হবে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান।

গত বৃহস্পতিবার, ২২ মে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের মাধ্যমে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর রোববার সন্ধ্যায় এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার ক্ষেত্রে বিভাগীয় মামলা ছাড়াই কেবল ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ’ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এমনকি কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, কর্মবিরতি বা অন্যদের উসকানির অভিযোগে ‘অসদাচরণের’ দায়ে শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে সচিবালয়ের কর্মীদের মধ্যে। তাদের মতে, এটি সরকারি চাকরিজীবীদের স্বার্থবিরোধী ও একতরফাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটানোর সুযোগ তৈরি করবে।

এক ঘণ্টার কর্মবিরতির পর বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দুপুরে সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপ তুলে ধরেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম, কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবীর এবং কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম।

তারা জানান, রবিবার, ১ জুন তিনজন উপদেষ্টা—খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, সড়ক, সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে।

পরবর্তী দিন, সোমবার, ২ জুন স্মারকলিপি দেওয়া হবে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার কাছে।

স্মারকলিপি প্রদানের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মাধ্যমেও একই দাবি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

ঐক্য ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির সময় এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হবে না। তবে দাবির বিষয়ে সন্তোষজনক অগ্রগতি না হলে আন্দোলন আরও কঠোর হতে পারে এবং ঈদের আগেই বড় পরিসরে কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।

নুরুল ইসলাম বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলে আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধান আসবে—এই আশায় আমরা আপাতত কর্মবিরতি স্থগিত করছি। তবে আশাব্যঞ্জক সিদ্ধান্ত না এলে ঈদের আগেই আরও কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করব।”

তিনি আরও বলেন, “অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে আমাদের ওপর অভিন্ন নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া হবে। তাই সময় থাকতে এর প্রতিবাদ জরুরি।”

এ আন্দোলন কেবল সচিবালয়েই সীমাবদ্ধ নেই। মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরেও কর্মবিরতির ডাক দেওয়া হয়েছে। ঐক্য ফোরাম জানিয়েছে, দাবি আদায় না হলে ৩১ মে’র পর থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে