পুঠিয়ায় প্রশাসনের যোগসাজশে অবৈধ পুকুর খনন

কে এম রেজা; পুঠিয়া, রাজশাহী | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
পুঠিয়ায় প্রশাসনের যোগসাজশে অবৈধ পুকুর খনন
রাজশাহীর পুঠিয়ায় প্রশাসনের যোগসাজশে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কোথাও তিনফসলী জমিতে আবার কোথাও পুরাতন পুকুর সংস্কারে নামে খননের কাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সমঝোতা করে দিন-রাত পুকুর খনন করা হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে পুকুরের খননকৃত মাটি পরিবহন করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করায়। উপজেলা জুড়ে সড়কগুলো প্রায় নষ্টের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট কোনো ব্যক্তি অভিযোগ দিলে এস্কেভেটরের(ভেকুর) ব্যাটারি খুলে আনতে দেখা যায়। পরবর্তি সময়ে দুই/একদিনের ভিতর আবার সমঝোতার মাধ্যমে ব্যাটারি দিয়ে দেওয়া হয় বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত জমির আকার পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার ভালুকগাছি ইউনিয়নের ম্যাছপাড়া বিলে প্রায় ১শত বিঘায় তিনফসলী জমিতে গোটিয়ার সায়েম,বানেশ্বর ইউনিয়নের রকি,সাবেক ইউপি সদস্য পিন্টু, ফুলবাড়ির কৈইপুকুরিয়া গ্রামে সিরাজ ৬০ বিঘা পুকুর এবং এই ইউয়িনের ছোট রাঙ্গামাটির ১০ বিঘা পুকুর সেলিম সংস্কার করছে। সড়কে মাটি পরিবহন ও বিক্রি করায় এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানায়,উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে বরেন্দ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের গভীর নলকূপের স্থাপনা,সেচের পাইপ এবং একাধিক বৈদ্যুতিক খুটি ধ্বংষের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি ১০টি স্থানে পুকুর খননের কাজ চলছে। আগামী কয়েক দিনের ভিতর আরো ২০ স্থানে পুকুর খননের প্রস্তুতি চলছে। উপজেলা প্রশাসন এবং থানায় পুকুর খননকারীদের প্রতিনিয়ত দেখা যায়। পুকুরের মাটি বিক্রেতারা এফএনএসকে জানিয়েছেন, থানা ও উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমরা পুকুর খনন এবং সংস্কার করে থাকি। এলাকাবাসীরা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন ভূমি পরিবর্তনের যে আইন আছে। সে অনুযায়ী অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে জেল ও জরিমানা আদায় করলে পুকুর খনন বন্ধ হয়ে যাবে।লোক দেখানো জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়ে থাকে। তারা জরিমানা আদায় করে থাকে অতি সামান্য পরিমাণের টাকা। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের হোসেন আলি বলেন,আগে আ.লীগের নেতারা পুকুর খননের ব্যাপারগুলি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন বিএনপির কিছু নেতা নিয়ন্ত্রণ করছে। পুকুর খননকারী দালালদের নিকট মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চিহ্নিত কয়েকজন পুকুর খননকারীদের বিএনপি’র স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। সংশ্লিষ্ট স্থানীয়রা বলছে,শুধুমাত্র অনেক টাকা লেনদেনের কারণে,পুকুর খননের কার্যক্রম কোনো ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। তাই উপজেলা জুড়ে তিনফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। আবুল কাশেম আলি নামক ব্যক্তি বলেন,দেশের মানুষ কি শুধু মাছ খেয়ে জীবনধারণ করবে। অন্য ফসলেও প্রয়োজন রয়েছে। উপজেলায় আস্তে আস্তে ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের আবুল কালাম বলেন, যেভাবে মাটি কাটা চলছে,এক সময় এই ইউনিয়নে কোনো ফসলি জমি থাকবে না। তারপর,যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে এলাকায় এক সময় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে শিলমাড়িয়া ইউপির সিংহভাগ জমি পুকুর খনন করা হয়ে গিয়েছে। পুকুরের খননকৃত মাটি ডাম ট্রাকে ইটভাটা ও বিভিন্ন নীচু স্থান পুরন করার জন্য মাটি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা করে। উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে পুকুরের খননকৃত মাটি পরিবহন করে বিক্রি করায়। উপজেলা জুড়ে সড়কগুলো প্রায় নষ্টের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। যা সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে গ্রামীণ সড়কগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম নুর হোসেন নির্ঝরকে ম্যাছপাড়া বিলের একশত বিঘা তিনফসলী জমিতে পুকুর খননের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে এফএনএসকে বলেন, যদি তিনফসলী জমিতে পুকুর খনন করে তাহলে আগামীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। আমরা অবৈধ পুকুর খননকারী এবং গ্রামীণ সড়ক নষ্ট করার বিরুদ্ধে প্রতিনয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত করে আসছি।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে