একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রতিবাদে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ধারাবাহিক হামলা ও উসকানির অভিযোগ উঠেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে। এসব হামলার ঘটনায় মতপ্রকাশের অধিকার, সহাবস্থানের পরিবেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাবান্ধব ও গণতান্ত্রিক পরিসর বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের ব্যানারে বামপন্থী সাতটি ছাত্র সংগঠন সোমবার (২৭ মে) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসের প্রতিবাদে একটি মশালমিছিলের আয়োজন করে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’ নামে ছাত্রশিবির একাধিক দফায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বহু শিক্ষার্থী আহত হন, যাঁদের অধিকাংশই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সংগঠক ও কর্মী ছিলেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৮ মে) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করলে, সেখানে আবারও ছাত্রশিবির ও জামায়াতকর্মীদের দ্বারা হামলা চালানো হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলাটি সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা।
ছাত্র ফ্রন্টের পাঠানো বিবৃতি অনুযায়ী, চট্টগ্রামের হামলায় গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন সংগঠনের নগর সভাপতি রিপা মজুমদার, নগর অর্থ সম্পাদক অর্পিতা নাথ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী, নগর সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাসসহ আরও অনেকে। নারী আন্দোলনকারীদের ওপর শারীরিক হামলার ঘটনায় বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ছাত্র ফ্রন্ট। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একজন নারী নেত্রীকে প্রকাশ্যে লাথি মারার ঘটনায় সারা দেশের বিবেকবান মানুষ ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ।
এছাড়া, বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্র জোটের মশালমিছিলে ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে উসকানি ও বাধা প্রদানের অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) জানায়, ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে শিবিরের কর্মকাণ্ড ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক শিক্ষার পরিবেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করছে।
অন্যদিকে, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দীন খান এক বিবৃতিতে দাবি করেন, বামপন্থী ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নষ্ট করছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে দুয়োধ্বনি দিয়েছেন।
ছাত্র ফ্রন্টের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় হবে নানা মত ও চিন্তার চর্চার জায়গা। সেখানে সন্ত্রাস ও দখলদারত্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁদের দাবি, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনা হোক।
প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ডাক দিয়ে ছাত্র ফ্রন্ট বলেছে, “জুলাই অভ্যুত্থানে আমরা যেসব মূল্যবোধ রক্ষা করার শপথ নিয়েছিলাম, সেগুলো আজ শিবির ও জামায়াতের সন্ত্রাসের হুমকিতে পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।”