আবু সাঈদের শাহাদতের দিন আগামী ১৬ জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে পারে: ড. বদিউল

এফএনএস (মমিনুল ইসলাম রিপন; রংপুর) : | প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৫, ০৮:১০ পিএম
আবু সাঈদের শাহাদতের দিন আগামী ১৬ জুলাই  জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হতে পারে: ড. বদিউল

জুলাই প্রক্লেমেশন এবং জাতীয় সনদ এক নয় উল্লেখ করে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, কাজ চলছে আগামী মাসে ঐক্যমত্য কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যমতে পৌছানো সম্ভব হবে। আগামী ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের  শাহাদতের দিন জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে।

শনিবার ( ৩১ মে) দুপুরে রংপুরের আরডিআরএস মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর বিভাগ আয়োজিত জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা বিষয়ক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জুর সভাপতিত্বে ও হাংগার প্রজেক্টের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজা শশাংক বরণ রায়ের সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য প্রধান উপদেস্টার বিশেষ সহকারি ( ঐক্যমত গঠন) জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনিয়র হায়দারসহ রংপুর মহানগরসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার সুজন প্রতিনিধি ছাড়াও গণমাধ্যমকর্মীরা।

 এসময় ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ ৭২  এর সংবিধান ছিল একব্যাক্তির শাসনব্যবস্থা কেন্দ্রীক। শেখ হাসিনা কিন্তু ট্যাংকে চড়ে আসে নাই। উর্দী পড়ে আসেন নাই। শেখ হাসিনা কিন্তু সংবিধানও বাতিল করে নাই। কিন্তু যে সাংবিধানিক বিধান ছিল, যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছিল ম আইনি কাঠামো ছিল। সেুগলোই তাকে স্বৈরাচারী করেছে। তিনি আরও কিছু আইন পরিবর্তন করে, সংবিধার পরিবর্তন করে পঞ্চদশ সংশোধনী করে পুরো সংবিধানটাকে বদলে দিয়েছিল । এর মাধ্যমে তার স্বৈরাচারী হওয়াটা আরও নিশ্চিত করেছে। সেই সংবিধানকে সংশোধন করে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের  দানবে পরিণত হয়েছিল।’ 

 বদিউল আলম বলেন, ‘ ছাত্ররা, ওই আবু সাঈদরা প্রাণ দিয়েছিল। কারণ তারা মৌলিক কতগুলো পরিবর্তন চায়। মৌলিক কতগুলো সংস্কার চায়। সংস্কার ছাড়া যদি নির্বাচন হয়, তাহলে আমাদের আশংকা থেকে যায়, তাহলে আমরা আবারও পুরোনো স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারি। আবারও আমাদের শাসক, যারাই সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলেও তারা দানবে পরিনত হতে পারে। তো এই জন্যই সংস্কার প্রয়োজন। এই জন্যাই আজকের এই আলোচনা।’

বদিউল বলেন,  ‘এখন রাজনৈতিক দলগুলোও সংস্কারের কথা বলছেন। কেউ বেশি সংস্কারের কথা বলছেন, কেউ কম সংস্কারের কথা বলছেন, কেউ নীতিগতভাবে কতগুলো বিষয়ে একমত হচ্ছেন। কিন্তু  বিস্তৃতভাবে আসতে গেলেই সেখানে অস্পস্টতা আছে।’

ড. বদিউল বলেন, ‘ এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্যমত্য কমিশনের আলাপ আলোচনা চলছে। আমাদের আকাঙখা হলো আগামী মাসের মধ্যে যেটা কাল (১জুন) থেকে শুরু হবে। একটা ঐক্যমতে পৌঁছানো। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে, হাজারটা বিষয়ে নয়। যেখানে সংবিধান সংশোধন লাগবে। যেখানে সংসদ সদস্যদের, রাজণৈতিক দলগুলোর সম্মতি লাগবে। যেখানে কতগুলো স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপুর্ন বিষয়গুলোতে তাদের (রাজনৈতিকদলগুলোর) মতামত দরকার। ‘

সুজন সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আজকে আলোচনার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, সরকারের সাথে এবং ঐক্যমত্য  কমিশনের সাথে।  এগুলো সম্পর্কে যেন জনগন সচেতন হয়, জনগন যেন তাদের মতামত দিতে পারে। এ গুলোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে লাগবে এবং সংবিধান  সংশোধন হয়তো লাগবে।  রাজনৈতিক দলের সাথে যে চুক্তি হবে। আমরা আশা করছি যে আগামী মাসের মধ্যে এই চুক্তিটা হবে। এবং এটা স্বাক্ষরিত হবে সেদিন- যেদিন আবু সাঈদ পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল। যেদিন আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়ে বুলেট নিয়েছিল। এবং শাহাদত বরণ করেছিল।’

এই মন্তব্য করার সময় আবেগাল্পুত হয়ে যান ড. বদিউল। তার দুই চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে থাকে। তিনি কিছুটা মুহুর্তে বাকরুদ্ধ থাকেন।

জুলাই প্রক্লেমেশন প্রসঙ্গে ড. বদিউল বলেন, ‘ আমি মনে করি জুলাই প্রক্লেমেশন হলো একটি ঐতিহাসিক দলিল। এটা এবং জুলাই সনদ আলাদা। ২৪ এর জুলাই বিপ্লবকে ঐতিহাসিক এবং আইনি কাঠামো দিতে যথা সময়েই সেটা হওয়া প্রয়োজন। এটার সাথে জুলাই সনদের কোন সম্পর্ক নেই ‘।

ড. বদিউল আলম মজুমদার সুজনের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ছাড়াও ঐক্যমত্য কমিশনেরও একজন সদস্য।

সংলাপে রংপুর বিভাগ থেকে সুজন প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে