বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার সোনাপুরা, চরআটজুড়ী ও চরবাশুড়িয়া গ্রামে আতঙ্কের অন্য নাম হয়ে উঠেছেন সোহাগ মোল্লা। প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান এই ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে একটি অপরাধচক্রের নেতৃত্ব দিয়ে এলাকাবাসীর জীবনে নেমে এনেছেন ভয়, অনিশ্চয়তা আর নিপীড়নের ছায়া। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তার কার্যকলাপ এখন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, সোহাগ মোল্লা ও তার সহযোগীদের নিয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেট এলাকায় মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, লুটপাট, জবরদস্তিমূলক বিয়ে এবং নারী পাচারের মতো অপরাধে জড়িত। সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না, কারণ প্রতিবাদ করলেই হুমকি-ধমকি এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
৫৫ বছর বয়সী আসাদ ভুঁইয়া বলেন, “সোহাগ মোল্লা তার একটি ছাগল আমার কাছে জোর করে বিক্রি করতে চেয়েছিল, আমি না কিনলে সে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এখন বাড়ি থেকে বের হতেও ভয় পাই।”
আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ করেন আয়শা বেগম নামের এক অসহায় মা। তিনি জানান, তার ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে সোহাগ মোল্লা প্রলোভন দেখিয়ে ও জোর করে ষাট বছর বয়সী এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেয় এবং বিয়ের বিনিময়ে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই ‘জামাই’ মেয়েটিকে কক্সবাজারে নিয়ে যায় এবং বলে সে জান্নাতীকে কিনে নিয়েছে, বিয়ে করেনি। কিছুদিনের মধ্যেই মেয়েটি নিজের জীবন রক্ষা করে পালিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
ভুক্তভোগী জান্নাতী নিজেও জানায়, “আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর যখন নিশ্চিত হই যে, আমাকে বিয়ের নামে কিনে নিছে তখন, কোন রকম জীবন নিয়ে পালিয়ে আসি।
স্থানীয় চৌকিদার ফারুক বলেন, “মাদক সেবন-বিক্রি, চুরি, ছিনতাই, গরীবদের নির্যাতন - এমন কোন অপরাধ নেই, যা সোহাগ মোল্লা করে না। তার বিরুদ্ধে বহুবার অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু তার প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।”
ওই তিন গ্রামবাসীরা এখন প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা দাবি করছেন, সোহাগ মোল্লা ও তার গঠিত অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে এলাকাবাসীকে মুক্তি দেওয়া হোক এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে।
এটি শুধুই একটি এলাকার সমস্যা নয় - এটি ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের প্রশ্ন। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি না থাকলে সোনাপুরা, চরআটজুড়ী ও চরবাশুড়িয়া গ্রাম একটি বন্দীগ্রামে পরিণত হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
সোহাগ মোল্লা মুঠোফোন বলেন, আপনাদের কাছে যে অভিযোগ হয়েছে তা সঠিক নয়। তবে, ছাগলের বিষয়টা সঠিক (আসাদকে মারপিট) করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে মোল্লাহাট থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সোহাগ মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ আসে নাই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।