দূর্ভোগে সহস্রাধিক মুসল্লি

সরাইলে দখল ভরাটে বন্ধ পানি নিস্কাশন

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
সরাইলে দখল ভরাটে বন্ধ পানি নিস্কাশন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে কয়েক শতাধিক বছরের পুরাতন ৭৪৬ শতক দেওয়ান দিঘী ড্রেজার দ্বারা ভরাট করে নিজেদের ইচ্ছায় শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন কয়েকটি চক্র। উপজেলা সদরের ওই দিঘীর দুই দিকের পানি নিস্কাশনের খাল দখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেই কারণে বিকাল বাজার শাহী (হাটখোলা) জামে মসজিদের ৩৫৫ বছরের ভাটিও এখন বন্ধ। গত ৮-১০ দিনের ভারী বর্ষণে দিঘীর ও মসজিদের পুকুরের পানি ফোঁলে উঠেছে। ফলে ময়লাযুক্ত পানিতে তলিয়ে গেছে মসজিদের ওজুখানা ও টয়লেট। বর্তমানে চরম দূর্ভোগ ও বিপাকে পড়েছেন মসজিদের সহস্রাধিক মুসল্লি। দিঘীর পাড় সংলগ্ন মার্কেট ও বাড়িঘরও ডুবু ডুবু অবস্থা। মসজিদের এই ভাটি নিয়ে কমিটি ও রাস্তা ছাড়া দিঘীর জায়গার ক্রেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দর কষাকষি চলে আসছিল। 

মসজিদ কমিটি, মুসল্লি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল সদরের বিকাল বাজার শাহী (হাটখোলা) জামে মসজিদটির বয়স প্রায় ৩৫৫ বছর। মসজিদ ঘেষা পূর্ব পাশে সদরের প্রধান সড়ক। সড়কের পূর্ব পাশে মসজিদের মার্কেট। মার্কেটের পরই মসজিদের পুকুর। এই পুকুরেই এক সময় মসুল্লিরা উজু গোসল করতেন। ভালো মাছ চাষও হতো। মসজিদের মার্কেট ও পুকুরের ভাটি ছিল পূর্ব পাশের নাল জায়গা/ দিঘী দিয়ে। গত ৫-৭ বছর ধরে কমিটির নিষেধ অমান্য করে পুকুরে বাজারের কিছু লোক ময়লা আবর্জনা ফেলে পানি নষ্ট করে ফেলেন। ফলে মুসল্লিদের সুবিধার্থে পুকুরের উত্তর পাড়ে ওজুখানা, প্রস্রাবখানা, টয়লেট ও গভীর নলকূপ বসায় কর্তৃপক্ষ। ভাটি পূর্ব পাশের দিঘী ও নাল জায়গা দিয়েই। গত প্রায় ২-৩ বছর ধরে মাঠের ফসলি জমি ড্রেজার দিয়ে কেটে পাইপের সাহায্যে মাটি এনে দিঘীর খন্ড খন্ড অংশ ভরাট করতে শুরূ করেন কয়েকটি চক্র। উপজেলা সদরের প্রাণ কেন্দ্রে অবৈধ পন্থায় পরিবেশ আইন অমান্য করে মনগড়ামত দিঘী ভরাট করে শ্রেণি পরিবর্তন করলেও রহস্যজনক কারণে নীরব থাকেন কর্তৃপক্ষ। আস্তে আস্তে ওই চক্রটি দিঘীটির প্রায় অর্ধেকের বেশী অংশ ভরাট করে ফেলেছেন। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে মসজিদের পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা। গত ৮-১০ দিনের ভারী বর্ষণে ফোলে ফেঁপে উঠেছে দিঘী ও মসজিদের পুকুরের পানি। ফলে তলিয়ে গেছে মসজিদের ওঁজুখানা, প্রস্রাবখানা ও টয়লেট। ময়লার ট্যাংকির পানির সাথে পুকুরের পানি মিশে দূর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। পুকুরের পানি কমাতে রাতের বেলা মেশিনে পানি সেচ করে সড়কে ছাড়া হচ্ছে। সেই পানি ছিটকে মুসল্লি ও পথচারীদের পড়নের কাপড় নষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই পানি আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম থেকে আসা শতশত মুসল্লি ওঁজু ও টয়লেট করতে গিয়ে চরম বিরম্বনায় পড়ছেন প্রতিদিন। ক্ষুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেক মুসল্লি ময়লাযুক্ত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়েছেন। মুসল্লিরা এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ চান। নিয়মিত মুসল্লি মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. রওশন আলী বলেন, ব্যক্তি গোষ্ঠী বা চক্রের লাভের জন্য মসজিদের হাজার হাজার মুসল্লিদের কষ্ট দেয়া যাবে না। ইচ্ছা করে যারা পরিবেশ দূষণ করেছেন ও পানি নিস্কাশন বন্ধ করে দিয়েছেন আমরা তাদের বিচার চাই। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা কুতুব উদ্দিন ও সদস্য মো. আছমত আলী বলেন, সাড়ে তিনশত বছর ধরে এই মসজিদের ভাটি পূর্ব দিকে। হঠাৎ করে ব্যক্তি স্বার্থে ভাটি বন্ধ করে মসজিদের হাজার হাজার মুসল্লিকে দূর্ভোগে ফেলেছেন। কতিপয় ব্যক্তি মসজিদের পূর্ব পাশ ভরাট করে ভাটি বন্ধ করে দিয়েছেন। আরো ১০-১৫ বছর আগে দিঘীর পুরাতন ভাটি (রেকর্ড) দক্ষিণ পাশে বড়দেওয়ান পাড়ার কবরস্থান ঘেষা খাল ও উত্তরদিকে সাহা পাড়ার ব্রীজের নীচের খাল দখলে নিয়ে স্থায়ীভাবে বন্ধ করেছেন নিস্কাশন। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পানি নিস্কাশনের স্থায়ী সমাধান চাই। আজ রোববার সন্ধ্যায় মসজিদ কমিটি সভায় বসব। পরবর্তীতে এই বিষয়টি নিয়ে আমরা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাব। তরী বাংলাদেশের আহবায়ক মো. শামীম আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, নিজেদের ইচ্ছায় এসি ল্যান্ড বা উপজেলা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে দিঘী ভরাট করে পরিবেশের বারটা বাজিয়ে দিয়েছেন। পরিবেশ ও প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করে না। তাই বিচার করছে। দিঘী ভরাটকারী ও পানি নিস্কাশনের খাল দখলকারীদের দ্রূত আইনে আওতায় এনে খাল উদ্ধার করার দাবী জানাচ্ছি। সেই সাথে দিঘীর মাটি তুলে নিয়ে পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে আনার আবেদন রাখছি।   

ভূমি অফিস সূত্র জানায়, ঐতিহাসিক দিঘীটির সাবেক দাগ ৬০৬৫। মোট জায়গার পরিমাণ ৭৪৬ শতক। হাল দাগ ১৪০৩৩, ৩৪,৩৫ ও ৩৬। এরমধ্যে ১৪০৩৫ থেকে ৩৫ শতক ও ১৪০৩৬ থেকে ৩০ শতক সর্বমোট ৬৫ শতক জায়গা খাস খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত। দিঘীর জায়গা ক্রয় বিক্রয়ের কারণে এ পর্যন্ত মোট ১৫টি খতিয়ান সৃজন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসাইন বলেন, বিষয়টি শুনেছি। খোজ খবর নিয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিব।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে